মরিচে রঙিন ফুলছড়ি হাট

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৪:১৭ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২৩

গাইবান্ধার লাল মরিচ বা শুকনো মরিচের কদর রয়েছে দেশব্যাপী। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদী বেষ্টিত জেলার চার উপজেলার চর-দ্বীপচরের শত শত বিঘা জমিতে মরিচের ব্যাপক ফলন হয়ে থাকে। সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরই চরের পলিমাটিতে বীজ ছিটিয়ে দু’তিনবার নিড়ানী দিলেই বিনা সারে বিস্তর ফলন হয় মরিচের।

ফুলছড়ি উপজেলায় মরিচচাষ বেশি হওয়ায় এখানে জেলার একমাত্র মরিচের হাট বসে। গজারিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রসংলগ্ন হাটে বিভিন্ন চর থেকে প্রচুর মরিচ আসে। ‘ফুলছড়ি মরিচ হাট’ নামে পরিচিত এই হাট এখন লাল মরিচের আমদানিতে রঙিন হয়ে উঠেছে। গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে কৃষকরা মরিচ বিক্রি করতে আসেন।

সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার দুই দিন সকাল ৭টা থেকে হাট বসে। প্রতি হাটে ২ হাজার মণের বেশি মরিচ বিক্রি হয় বলে জানান হাট ইজারাদার।

হাটে গিয়ে দেখা যায়, সূর্য ওঠার পর থেকেই হাটে আসতে শুরু করেছে মরিচ। নৌকা এবং ঘোড়ার গাড়িতে করে ফুলছড়ি উপজেলার টেংরাকান্দি, মোল্লারচর, খোলাবাড়ি, ফজলুপুর, এরেন্ডবাড়ি, উড়িয়া, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বকশিগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে কৃষক ও পাইকাররা মরিচ বিক্রি করতে এসেছেন। লাল টুকটুকে মরিচে সাজানো বস্তায় কাণায় কাণায় ভরে উঠেছে হাট।

এরপর শুরু হয় বেচাকেনার হাঁকডাক। মঙ্গলবার হাটে দুপুরের আগেই অন্তত আড়াই হাজার মণ শুকনা মরিচ বিক্রি হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

মরিচে রঙিন ফুলছড়ি হাট

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার ৭ উপজেলায় ২ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে মোট উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন শুকনা মরিচ। এর মধ্যে শুধু ফুলছড়িতে ৯৯২ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৩৮ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ করা হয়েছে জেলার ছয় উপজেলায়।

গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য ও মরিচ হাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি জিহাদুর রহমান মওলা বলেন, ফুলছড়ি হাটে হাইব্রিড, বগুড়ার জাত ও স্থানীয় জাতের শুকনো মরিচ বেশি আমদানি হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যেমন বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরাও এ হাট থেকে শুকনো মরিচ কিনে নিয়ে যান।

পার্শ্ববর্তী জেলা বগুড়া থেকে ফুলছড়ি হাটে মরিচ কিনতে এসেছেন সিরাজুল ইসলাম ব্যাপারী। তিনি জানান, ভোরবেলা ট্রাক নিয়ে এ হাটে মরিচ কিনতে এসেছেন। এবার হাটে মরিচের দাম খুব চড়া। তবে ফুলছড়ির মরিচ ভালোমানের। সাড়ে ১৫ হাজার টাকা মণ দরে প্রায় ৩৫ মণ মরিচ কিনেছেন তিনি।

পাইকারি মরিচ কেনার জন্য দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে এসেছেন ব্যাপারী খলিলুর রহমান (৪৫)। তিনি বলেন, প্রতি বছরই এ হাট থেকে শুকনা মরিচ কিনে দিনাজপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারের বিক্রি করেন। গত বছর মরিচ কিনেছিলেন মণপ্রতি ১০ থেকে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মরিচের মান ভালো। কিন্তু দামটা খুবই চড়া।

মরিচে রঙিন ফুলছড়ি হাট

উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের গলনাচরের কৃষক আব্দুল মজিদ (৩৬) বলেন, বিঘা প্রতি কাঁচামরিচ উৎপাদনে ব্যয় হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বিঘায় ৫০ মণের বেশি মরিচ উৎপন্ন হয়। ৫০ মণ কাঁচামরিচ জমিতে লাল রং হয়ে পাকার পর তা রোদে শুকিয়ে ১০ মণের মতো শুকনা মরিচ হয়। শুকাতে শ্রমিকসহ অন্যান্য আরও খরচ হয় প্রায় হাজার দশেক টাকা। সে হিসেবে ১০ মণ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। ব্যয় বাদে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো আয় হয় তার।

মরিচ বিক্রেতা ফুলছড়ি গ্রামের আব্দুর মনসুর (৫৫) জানান, এ হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসেন প্রায় হাজার খানেক কৃষক।

ফুলছড়ি হাট ইজারাদার বজলুর রহমান মুক্তা জানান, সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার দুদিন সকাল ৭টা থেকে হাট বসে। এবার প্রতিমণ মরিচ ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হাটে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার মণ শুকনো মরিচ বিক্রি হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম জানান, গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় যে পরিমাণ মরিচের চাষ হয় তার অর্ধেকই উৎপন্ন হয় ফুলছড়ি উপজেলায়। আবহাওয়া ও চরের উর্বর মাটিতে দিন দিন মরিচচাষের পরিমাণ বাড়ছে। চরের লোকজনও মরিচচাষে ঝুঁকছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শসহ সবধরনের কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।