ব্যস্ত জামদানিপল্লির কারিগররা, বিক্রি কম বলছেন ব্যবসায়ীরা

মোবাশ্বির শ্রাবণ মোবাশ্বির শ্রাবণ , জেলা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪:৩১ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২৩

ঈদ উপলক্ষে যতটা আশা করেছিলেন ঠিক ততটা ক্রেতাদের সাড়া পাচ্ছেন না নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া এলাকার বিসিক জামদানিপল্লির ব্যবসায়ীরা। কারিগররা কিছুটা কাজের মধ্যে দিয়ে সময় পার করলেও ব্যবসায়ীরা দোকানে বসে অলস সময় পার করছেন। দুইমাস আগেও তাদের মোটামুটি বেচাকেনা ছিল। কিন্তু ঈদের সময় এসে তাদের বেচাকেনা যেন একেবারেই কমে গেছে।

ব্যবসায়ীরা যে লক্ষ্য নিয়ে দোকানে মালামাল তুলেছিলেন বিক্রির সময় এসে তার ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারছেন না। সকাল গড়িয়ে দুপুর এবং দুপুর গড়িয়ে রাত হলেও ক্রেতার দেখা মেলে না। সরেজমিন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। ক্রেতা না থাকায় অনেক ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

jagonews24

গোলজার জামদানি হাউজের মালিক গোলজার হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, আশা করেছিলাম এবার অনেক বেচাকেনা করতে পারবো। কিন্তু আসলেই কিছু হচ্ছে না। রোজার আগে লাখ লাখ টাকার মালামাল কিনে রেখেছিলাম বিক্রি করার আশায়। সেই তুলনায় ক্রেতা নেই। এবারের মতো পরিস্থিতি অন্য কোনো সময় হয়নি। আমাদের যে টার্গেট ছিল তার অর্ধেকেও যেতে পারিনি।

তাহিয়া জামদানি উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষে কোনো বেচাকেনাই নেই। সারাদিন দোকানে বসে অলস সময় পার করছি। আমাদের এখানে যে বিক্রয়কেন্দ্রগুলো আছে কোনোটিতেই বেচাকেনা নেই। ঈদ উপলক্ষে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম কিন্তু এখন লাভ করা তো দূরের কথা সেই টাকা উঠানোটাই যেন দায় হয়ে গেছে।

jagonews24

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া এলাকার বিসিক জামদানি পল্লিতে ৪০৭টি প্লট আছে। আর প্রতি প্লটে কমপক্ষে চারটি করে তাঁত রয়েছে। বর্তমানে জামদানি পল্লিতে প্রায় ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ তাঁতশিল্পী কাজ করছেন। তারা জামদানি শাড়ি তৈরির পাশাপাশি পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস ও টু-পিস তৈরি করছেন। তবে ঈদ উপলক্ষে তারা শাড়ি তৈরিতেই বেশি ব্যস্ত রয়েছেন।

এখানে বোনা বিভিন্ন ধরনের জামদানির মধ্যে বাঘনলি, কলমিলতা, চন্দপাড়, ঝুমকা, তেরছা, পান্নাহাজার, করোলা, ময়ূরপ্যাঁচপাড়, দুবলাজাল, সাবুরগা, বলিহার, শাপলাফুল, আঙ্গুরলতা, ফুল তেরছি, জলপাড়, ছিটার তেরছি, ছিটার জাল, সুই জাল, হাঁটুভাঙা তেরছি, পার্টির জাল, ডালিম তেরছি, পান তেরছি, গোলাপ, জুঁই, শাপলা ও মদন পাইরসহ শতাধিক নকশার জামদানি রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব কেন্দ্র করে দেশের বাজারের পাশাপাশি বিদেশেও এসব জামদানি রপ্তানি হয়ে থাকে।

jagonews24

কারিগররা জানান, একটি শাড়ি বুনতে চারদিন থেকে শুরু করে এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে থাকে। সুতার কাউন্টের ওপর শাড়ি বোনার সময় নির্ভর করে। সেইসঙ্গে প্রতিটি জামদানি শাড়ি দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। নজরকাড়া ডিজাইন ও সুতার কাউন্টের ওপর ভিত্তি করে শাড়ির দাম কম-বেশি হয়ে থাকে। যে কাপড়ের সুতার কাউন্ট যত বেশি দামও তত বেশি।

দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর ধরে এই জামদানি পল্লিতে কাজ করছেন সুমন। তারা পারিবারিকভাবেই এই জামদানি শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সুমন বলেন, আগের চেয়ে এবার ভালোই কাজ হচ্ছে। আগে যেমন সপ্তাহ প্রতি চার হাজার টাকা মজুরি পেতাম, এখন ঈদ উপলক্ষে ছয় হাজার টাকা মজুরি পাচ্ছি।

মহিন নামে এক তাঁতশিল্পী বলেন, ঈদের কারণে কাজের চাপ বেড়েছে। কাজের চাহিদা বেড়েছে। আগের তুলনায় আমাদের মজুরিও বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ভালোই চলছে। যেহেতু কাজের চাপ বেড়েছে সেজন্য মজুরিও বেড়েছে।

jagonews24

ফিহানা জামদানি হাউজের মালিক মো. রিফাত বলেন, আগের তুলনায় বেচাকেনা কিছুটা ভালো। আমাদের আগের তুলনায় খরচের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। তারপরেও সবকিছু মিলিয়ে মোটামুটিভাবে ভালো বিক্রি হচ্ছে। আমরা লাভবান হতে পারছি। পারিবারিকভাবেই আমরা এই ব্যবসা করে আসছি। আমার এটার মধ্যেই থাকতে হবে।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জের জামদানি বিসিক শিল্পনগরীর সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বায়েজিদ হাসেন জাগো নিউজকে বলেন, বিসিক জামদানি শিল্পনগরীতে অন্য শিল্পনগীরর মতোই ঈদ ঘিরে কর্মমুখর পরিবেশে কর্মউদ্দীপনা চলছে। ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে জামদানি উৎপাদন বেড়েছে সেইসঙ্গে বিক্রিও বেড়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার যথেষ্ট পরিমাণে বিক্রি বেড়েছে। প্রতিবছরই জামদানি পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের এখানে যে জামদানি হাট কর্নার রয়েছে সেখানে অন্য মাসে প্রায় আট থেকে ১০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। ঈদ, পূজা, পার্বণে সেই লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আশা করা হচ্ছে, এই ঈদে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা লেনদেন হবে। জামদানি কারিগরদের অবস্থা আগের তুলনায় অনেকটা ভালো। তাদের বেচাকেনা এবং উৎপাদন ভালো আছে। তাঁতিরা ভালো থাকলে আমাদের জামদানি শিল্প বাঁচবে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি বেঁচে থাকবে। সর্বোপরি দেশের উৎপাদন ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।

 

এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।