ঐতিহ্য হারাচ্ছে ৩০০ বছরের শুঁটকি মেলা
হাওরবেষ্টিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে প্রায় তিনশ বছর ধরে পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে বসছে শুঁটকি মেলা। পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখের প্রথমদিন উপজেলার কুলিকুন্ডায় এই মেলা বসে।
তবে শুটকিসহ প্রায় সব পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে মেলার ঐতিহ্যে ভাটা পড়েছে। এবার নগদ টাকার বিনিময়ে শুঁটকি বেচাকেনা হয়েছে। মেলার শুরুতে ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সীমিত পরিসরে কয়েক মুহূর্তের জন্য চলে বিনিময় প্রথা।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে কুলিকুন্ডা গ্রামের উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসেছিল ওই শুঁটকি মেলা। দোকানিরা শোল, বোয়াল, গজার, টেংরা, পুঁটিসহ বিভিন্ন ধরনের শুঁটকির পসরা সাজিয়ে বসেন মেলায়।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই মেলায় গ্রামের লোকজন ও দোকানিদের মধ্যে পণ্য বিনিময়ের প্রথা চলে আসছে। স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত চাল, ডাল, ধান, শিমের বিচি, আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি কিনে নিতেন। বিনিময় প্রথার পাশাপাশি টাকা দিয়েও শুঁটকি কেনা হয়। মেলায় শুঁটকির পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ শিশুদের খেলনাসামগ্রী বিক্রি হয়। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চলতি বছর বিনিময় প্রথা পালন হয়নি।
ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় দূর-দুরান্ত থেকে কয়েকশ দোকানি শুঁটকি নিয়ে হাজির হয়েছেন। এদিকে, শুটকি মেলা কেন্দ্র করে আশপাশের জমিতে বসেছে লোকজ মেলা। মেলায় সার্বিক বেচাকেনা ভালো হওয়ায় খুশি দোকানিরা।

বাজারে আসা ক্রেতা মো. মহব্বত আলী বলেন, প্রাচীনকালে যখন কাগজের মুদ্রা প্রচলন হয়নি ঠিক তখন থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের বিনিময়ে বেচাকেনা করতেন। বিশেষ করে শুঁটকি ছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তবে কালের বিবর্তনে এই মেলা অনেকটাই জৌলুস হারিয়েছে। শুধু তাই নয়, হারিয়েছে চিরচেনা বিনিময় প্রথাও। তারপরেও ঐতিহ্য হিসেবে এই মেলায় শুঁটকি কেনার জন্য এসেছি।
মেলায় শুঁটকি বিক্রি করতে আসা দোকানি কৃষ্ণদাস বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ঐতিহ্যবাহী পণ্য বিনিময় প্রথা হ্রাস পেয়েছে। অথচ একবছর আগেও এই প্রথা চালু ছিল। এখন নামমাত্র এই প্রথা চালু আছে।

তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিনিময় প্রথায় এবার আগ্রহী নন ক্রেতা-বিক্রেতারা। তাই এ মেলার ঐতিহ্য হারিয়েছে।
মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওহাব আলী বলেন, বিনিময় প্রথার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য অল্পপরিসরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে-সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্য পণ্য বিনিময়রে মাধ্যমে শুঁটকি কেনাবেচা হয়। পরে টাকার বিনিময়ে বেচাকেনা চলে।

তিনি আরও বলেন, মোগল আমল থেকে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা হয়ে আসছে। মেলায় শোল, বোয়াল, গজার, বাইম, পুঁটি, টেংরাসহ নানা জাতের শুঁটকির দোকান বসেছে।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/এমআরআর/এএসএম