সিলেটে ইফতার-সেহরিতেও লোডশেডিং

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৭:৪৫ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২৩
ফাইল ছবি

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে সিলেটে ইফতার এবং সেহরির সময়ও লোডশেডিং হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় অর্ধেক সময়ই এখানে বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে ক্ষুব্ধ সিলেটের সাধারণ মানুষ। কোথাও কোথাও আবার বিদ্যুতের এমন আসা-যাওয়া খেলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে, বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। দ্রুত বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এক কথায় বলা যায়, এই লোডশেডিংয়ের কারণে ক্ষোভে ফুঁসছেন সিলেটের বাসিন্দারা।

সিলেট মহানগরের শাহপরাণ থানার বটেশ্বর এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম মাহফুজ রুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, ১০-১২ দিন ধরে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। এমনকী ইফতার এবং সেহরির সময়ও লোডশেডিং হওয়ায় চরম বিপাকে আছি। এ ধরনের ঘনঘন লোডশেডিং নিকট অতীতে হয়নি।

সিলেট নগরের ঘাসিটুলা এলাকার বাসিন্দা এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী মহিমা আক্তার জাগো নিউজকে বললো, একদিকে তীব্র গরম অন্যদিকে আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষার চাপ। এর মধ্যে এখন যোগ হয়েছে লোডশেডিং। রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় ঠিকমতো পড়াশোনা করা যাচ্ছে না।

এই পরীক্ষার্থী বললো, দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ থাকে না। একবার বিদ্যুৎ গেলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে আসতে।

ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বিপাকে আছেন ব্যবসায়ীরাও। ঈদবাজারের এই সময়ে লোডশেডিংয়ের কারণে ঈদের কেনাকাটায় লোকজন গরমের জন্য দিনের বেলা মার্কেটে আসছেন কম। এছাড়া জেনারেটর চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নগরজুড়ে শব্দ দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে।

এ বিষয়ে সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন জাগো নিউজকে বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। জ্বালানি তেলের দামও চড়া। এ অবস্থায় দিনে ৮/৯ ঘণ্টা জেনারেটর চালিয়ে ব্যবসা করে আয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে বিদ্যুতের এই সংকট দ্রুত সমাধান করা উচিত।

ঘনঘন লোডশেডিং প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদির জাগো নিউজকে বলেন, দেশে তাপপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় এবং ঈদের সময় পুরো রাতই বিপণিবিতানগুলো খোলা রয়েছে। এতে চাহিদাও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। যার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত এর একটা সমাধান হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিলেট বিভাগে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ৭৪০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে আমরা পাচ্ছি ৫৪০ মেগাওয়াট। ২০০ মেগাওয়াটের মতো ঘাটতি আছে। এছাড়া সিলেট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৭০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে আজ আমরা পেয়েছি ৮৭ মেগাওয়াট। যার কারণে বাধ্য হয়েই প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

আব্দুল কাদির বলেন, বুধবার (১৯ এপ্রিল) থেকে ঈদের ছুটি শুরু হবে। বন্ধ হয়ে যাবে অফিস-আদালত। তখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।

এদিকে, গত রোববার দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে সিলেট নগরের নয়সড়ক এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, এলাকায় রোববার ইফতারের আগ থেকেই বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুতহীন অবস্থায় তারা ইফতার করেছেন এবং তারাবির নামাজ পড়েছেন। পরে রাত ১১টার দিকে বাধ্য হয়ে তারা সড়ক অবরোধ করেছেন। তবে অবরোধ শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে আসায় তারা সড়ক থেকে সরে যান।

গ্যাস-বিদ্যুৎ গ্রাহক কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী নাসির উদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও সদস্য সচিব মকসুদ হোসেন এক বিবৃতিতে বলেন, গত ১৪ এপ্রিল থেকে সিলেট নগরীতে বিদ্যুতের মাত্রারিক্ত লোডশেডিংয়ে নগরবাসী অতিষ্ঠ ও ক্ষুব্ধ। গ্রীষ্মের এই প্রচণ্ড গরমের সময় পবিত্র রমজান মাসে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। লোডশেডিংয়ের ফলে এসএসসি পরীক্ষার্থী, শিশু, রোগী ও বয়োবৃদ্ধরা কষ্ট পাচ্ছেন বেশি। রমজান মাসের শুরুতে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ধর্মপ্রাণ জনগণ বিদ্যুৎ বিভাগের ওপর খুশি ছিলেন।

বিবৃতিতে নেতারা আরও বলেন, খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে দেশের অনেক বিভাগীয় শহরে লোডশেডিং হচ্ছে না। অথচ অর্থনৈতিক, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ও বাংলাদেশের অর্থনীতির যোগানদাতা সিলেট অঞ্চলকে লোডশেডিংয়ের আওতায় এনে সরকার সিলেটকে অবজ্ঞা-অবহেলা করছে। এই মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং কোনোভাবে গ্রহণ যোগ্য হতে পারে না।

অবিলম্বে সিলেটে মাত্রারিক্ত লোডশেডিং বন্ধের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, অন্যথায় রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

ছামির মাহমুদ/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।