রমজানে ১০ হাজার রোজাদারকে ইফতার করাচ্ছে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শেরপুর
প্রকাশিত: ০৯:১৭ এএম, ২০ এপ্রিল ২০২৩

পবিত্র রমজানে ১০ হাজার রোজাদারের হাতে ইফতার তুলে দিচ্ছে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ শেরপুর জেলার সদস্যরা। শেরপুরের পাঁচ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মোড়, বাজার, এতিমখানা, মাদরাসা, মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হচ্ছে এই ইফতার।

সংযম ও শুদ্ধতার আলো ছড়িয়ে দিতে ইফতারে খুশি নামের এই প্রকল্প পরিচালনা করা হচ্ছে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এর আগে গেলো দুই বছর (২০২১ ও ২০২২ সাল) পবিত্র রমজানেও এই প্রকল্প পরিচালনা করেছে সংগঠনটি। তারই ধারাবাহিকতায় ইফতারে খুশি সিজন থ্রির আওতায় ১০ হাজার মানুষকে ইফতার করানো হচ্ছে।

ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ শেরপুর জেলার তথ্যমতে, জেলার শ্রীবরদী উপজেলার গিলাগাছা এলাকায় প্রতিদিন কাটারিভোগ চালের খিচুড়ি রান্নার পর প্যাকেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। প্রতিটি প্যাকে ডিম, খেজুর, জিলাপি, শসা, লেবু সরবরাহ করা হয়। খিচুড়ির মেন্যুতে থাকে মুরগি বা গরুর মাংস। নির্ধারিত ভ্যানে করে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা একেক দিন একেক এলাকা ও উপজেলায় গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড়, বাজার, এতিমখানা, মাদরাসা, মসজিদে ইফতারের ব্যবস্থা করেন।

তবে এবারের আয়োজনে গিলাগাছা এলাকার ছিন্নমূল ১২০টি পরিবারকে প্রতিদিন ইফতার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বাকি ইফতারগুলো সাধারণ রোজাদার, পথচারী, এতিম শিক্ষার্থী ও হেফজ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। চলতি রমজানে প্রায় ২০টি মাদরাসা ও ১০টি মসজিদসহ পাঁচ উপজেলার ১০ হাজার মানুষের হাতে ইফতার তুলে দেওয়ার কার্যক্রমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা।

সংগঠনের সাবেক সহ-সভাপতি মশিউর রহমান সজীব বলেন, প্রান্তিক জেলা শেরপুরে এত বড় কর্মযজ্ঞ চালানো সত্যি খুব কঠিন ও সাহসিকতার কাজ। আমরা করোনাকালে এই উদ্যোগটি শুরু করি। স্থানীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে অনেকেই। এবার তৃতীয়বারের মতো আমরা এই কাজটা করতে পেরে ভালো লাগছে। পুরো মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতি মুহূর্তে ছিল অনিশ্চয়তা। তারপরও আমরা শেষ করতে পেরেছি।

ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের অ্যালামনাই সদস্য নাঈম তালুকদার বলেন, এই কাজটি আসলেই অনেক পূণ্যের একটি কাজ। প্রতিটা মানুষ অনেক তৃপ্তি নিয়ে আমাদের ইফতার গ্রহণ করে। আমরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কাজটি করি প্রতিবছর। সবার সহযোগিতায় এবার এই প্রকল্প শেষ করতে পারবো ইনশা আল্লাহ। হাতে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেছিলাম এবারের প্রকল্প। মাস শেষে আমাদের খরচ প্রায় তিন লাখ। আমরা ইফতারের জন্য ২০ টাকাও ডোনেশন পেয়েছি।

প্রজেক্ট অফিসার হেদায়েতুল ইসলাম রাজীব বলেন, ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়েও আমাদের ভলান্টিয়াররা কাজ করেছেন। পুরো মাস ধরে এই কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে যারা সময়, শ্রম ও মেধা দিয়েছেন, সবার প্রতিই কৃতজ্ঞতা। প্রতিদিনের বাজার ও রান্না এটা ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। আমাদের সাবেক সভাপতি নাঈম তালুকদারের নির্দেশনায় প্রতিদিনের বাজার করে ইফতার বিতরণ পর্যন্ত আমরা এ বিষয়গুলো নিয়েই ভেবেছি। বিভিন্ন উপজেলাতে ইফতার পাঠানোর কাজটা অনেক কঠিন ছিল। সবই আমরা সম্ভব করেছি অদম্য কিছু ভলান্টিয়ারদের কল্যাণে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহিবুল আলম রাব্বী বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আমরা অনেকের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। অনেকেই আমাদের অর্থায়ন করেছেন। সেই অর্থেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। দাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের সহযোগিতা ছাড়া তৃতীয়বারের মতো আমরা এই প্রকল্প শেষ করতে পারতাম না।

ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ শেরপুর জেলার সহ-সভাপতি আনিকা তাসফিয়া বলেন, আমাদের সংগঠনের প্রত্যেক ভলান্টিয়ার ডেডিকেটেডলি কাজ করেছে। নিজেদের ব্যস্ততার মধ্যেও পুরো মাস সবাই সময় দিয়েছে। ইফতারের জন্য বাজার করা থেকে শুরু করে, রান্না করা, প্যাকেজিং করা এবং বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজটা আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও ভলান্টিয়াররা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করেছে। আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ শেরপুর জেলার সভাপতি ইমরান হাসান রাব্বী বলেন, উচ্চমূল্যের বাজারে কোনো কাজ শুরু করার সাহস করাটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং। আমাদের এই প্রকল্পে অর্থায়নকারী সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। যারা আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েও পাশে ছিলেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা। সব স্বেচ্ছাসেবী অনেক পরিশ্রম করেছে পুরো মাস ধরে। বিশেষ করে ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড মেম্বার ও কমিটি মেম্বারদের আন্তরিকতায় আমাদের এই প্রকল্পটি সফল হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ সারাদেশের মতো আমাদের শেরপুরেও সারাবছর ধরে এসডিজি গোল বাস্তবায়নে প্রান্তিক মানুষ, শিক্ষার্থী ও পশ্চাদপদ জনপদের জন্য কাজ করে। তারই ধারাবাহিকতায় পবিত্র রমজানে আমাদের চেষ্টা ছিল একটি মহৎ আয়োজনে সবার সঙ্গে থাকার, সেটা সম্ভব হয়েছে আমাদের অর্থায়নকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই আমাদের ভিবিডির ন্যাশনাল বোর্ডের কয়েকজন সিনিয়র ভাইয়া, ইদ্রিস গ্রুপ অব কোম্পানি ও জেলা পুলিশের প্রতি। আমাদের এই প্রকল্পের বড় একটি অর্থ এসেছে তাদের কাছ থেকে।

ইমরান হাসান রাব্বী/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।