‘আমরা আত্মহত্যা করলে কি প্রশাসনের টনক নড়বে?’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

৩৫ হাজার গ্রাহকের আমানতের ১০৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি এনজিওর মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রোববার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে টাকা ফেরতের দাবিতে এনজিওটির সাত শতাধিক আমানতকারী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়েছিলেন।

সেখানে সদর উপজেলার বাসুদেবপুর এলাকার গৃহবধূ খালেদা খাতুন (৩৪) নামে এক আমানতকারী বলেন, ‘৩৫ হাজার পরিবারের লাখ লাখ মানুষের চোখের পানিও কী আপনাদের কাছে মূল্যহীন? আমাদের প্রতি কোনো দয়া-মায়া হয় না? এতগুলো মানুষের ১০৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে যারা বসে আছে, তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? আমরা কি করব, কোথায় যাব? কার কাছে গেলে আমানতের টাকা ফেরত পাব? জনগণের টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এই টাকার জন্য এখন সংসার হারাতে বসেছি। এতগুলো মানুষ সবাই মিলে আমরা আত্মহত্যা করলে কি প্রশাসনের টনক নড়বে?’

তিনি আরও বলেন, ‘জমি কেনার জন্য অনেক কষ্টে টাকাগুলো মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার বাসুদেবপুর শাখায় জমা রেখেছিলাম। টাকা নেওয়ার সময় তারা বলেছিল, যখন চাইবেন তখনই ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু জমি কেনার জন্য টাকা চাইতে গেলে তা ফেরত দিচ্ছে না। আমার স্বামী এখন আমাকে এই টাকা না দেওয়ার জন্য ডিভোর্স দিতে চায়। আমি সংসার হারানোর উপক্রম হয়েছি। প্রশাসনের কাছে বারবার গেলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

নাচোল উপজেলার নেজামপুরের কাজল মুখার্জির স্ত্রী টুম্পা মুখার্জি বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে দিনমজুর স্বামীর জমানো টাকা রেখেছিলাম মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায়। জমি কেনার জন্য জমানো টাকা না পেয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার মতো এলাকার হাজারও মানুষের অবস্থা এমন।’

সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের স্নাতক পড়ুয়া লতিফা খাতুন বলেন, ‘আমার কোনো ভাই নেই। বাবার উপার্জনের ছয় লাখ টাকা মধুমতি এনজিওতে জমা রেখেছিলাম। কিন্তু বাবা অসুস্থ হওয়ার পরেও এখন চিকিৎসা করার জন্য টাকা উত্তোলন করতে পারছি না। বারবার এনজিও অফিসে ঘুরেও দিব দিচ্ছি বলে না দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। টাকার জন্য এখন অসহায় দিন যাপন করছি।’

জেলা শহরের বিজয় নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সানজিদা খাতুন বলেন, ‘জমি বিক্রি করে টাকা জমা রেখেছিলাম মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায়। সেখান থেকে মাসে মাসে টাকা তুলে বেতন দিতাম। কিন্তু কয়েকমাস হলো টাকা আত্মসাৎ করে এর মালিকপক্ষের লোকজন পালিয়েছে। এখন কলেজের বেতন দিতে পারছি না।’

মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এসলাম হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে একাধিক মামলা চলমান। মামলাগুলোর আসামিদের গ্রেফতার ও টাকা ফেরতের বিষয়ে কী অবস্থায় রয়েছে, তা জানতেই গ্রাহক ও এনজিওকর্মীরা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান। কয়েকজন আসামির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে এবং কয়েকজন আদালত থেকে জামিনে আছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলা চলছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

সোহান মাহমুদ/এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।