বরিশালে ‘খোকন অনুসারী’ পরিচয়ে দখলের মহোৎসব

শাওন খান
শাওন খান শাওন খান , জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল
প্রকাশিত: ০৫:০৪ পিএম, ২৫ মে ২০২৩

আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাকে সরিয়ে তার আপন চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই পাল্টাতে শুরু করেছে বরিশালের চিত্র। সাদিক আবদুল্লাহ ও তার অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল শুরু করেছেন সাদিক বিরোধীরা।

মনোনয়ন ঘোষণার দিন থেকে এ পর্যন্ত একে একে সাতটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের দখলে নিয়েছেন সাদিক বিরোধীরা। তারা প্রত্যকেই অবশ্য নিজেদের ‘খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী’ বলে দাবি করছেন।

এদিকে দলের কর্মীদের এমন কর্মকাণ্ডে খোদ খোকন সেরনিয়াবাত নিজেই বিব্রত বলে জানিয়েছেন তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে থাকা কয়েকজন সদস্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব দখল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ ব্যক্তি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীমের লোকজন। যারা এখন খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী বলেও নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন। মেয়র সাদিক ও তার অনুসারীদের কারণে এতদিন কোণঠাসা হয়ে ছিলেন এসব লোকজন। কিন্তু খোকন সেরনিয়াবাত নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই তারা সক্রিয় হয়ে ওঠেন খোকন শিবিরে।

অনেকে ঠাঁই পেয়েছেন খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতেও। এদের মধ্যে অন্যতম ছাত্রলীগের তিন নেতা। তারা হলেন, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসিম দেওয়ান ও বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের অস্থায়ী কর্মপরিষদের সাবেক ভিপি মঈন তুষার।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, গত ১৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী ঘোষণার পর সাতটি প্রতিষ্ঠান দখলে নিয়েছেন সাদিক বিরোধীরা। যেসব প্রতিষ্ঠান এতদিন সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এছাড়া আওয়ামী লীগের কার্যালয় বানানোর নাম করে দখল করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন পৌর সুপার মার্কেটের প্রায় তিন হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্লোর। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে খোকন শিবিরে। কারণ দখলদার কিংবা তাদের ইন্ধনদাতা কেউ সরাসরি খোকনের অনুসারী নন। তারা পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেয়র প্রার্থী হিসেবে খোকন সেরনিয়াবাতের নাম ঘোষণার দিন সন্ধ্যায় নগরীর স্পিডবোট ঘাট দখলে নেন আওয়ামী লীগ কর্মী সাদ্দাম হোসেন শাহ ও তার সহযোগীরা। এর আগে ঘাটটি সাদিক অনুসারী মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরদিন ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যার পর বরিশালের রুপাতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন থ্রি-হুইলার স্ট্যান্ড ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড দখলে নেন জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান সুমন মোল্লা ও সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক। তারা দুজনই পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী। পরদিন জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাবেক সভাপতি আফতাব হোসেনের সহযোগীরা নিয়ন্ত্রণে নেন নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের অধিকাংশ। যা এতদিন সাদিকের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

এছাড়া গত ৭ মে রাতে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ তারিক বিন ইসলামসহ তার সহযোগীরা ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত অমৃতলাল দে সড়কের সিটি করপোরেশনের একটি মার্কেটের প্রায় ৩ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর দখল করে নেন। ১৫ মে শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক আরিফুর রহমান সুমন মোল্লা ও তার লোকজন রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড দখলে নেন। সুমন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী। একই দিন আবদুল্লাহ আল নোমান নামে এক ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ (বাকসু) ভবন দখলে নেওয়া হয়। নোমান বাকসুর অস্থায়ী কর্মপরিষদের সাবেক ভিপি মঈন তুষারের সহযোগী।

এ ব্যাপারে সুমন মোল্লা বলেন, থ্রি-হুইলার ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করতেন সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা। তারা সাধারণ মানুষ ও বাস শ্রমিকদের অনেক নির্যাতন করতেন। তাদের ভোগান্তি লাঘবে আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি।

বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের অস্থায়ী কর্মপরিষদের সাবেক ভিপি মঈন তুষার বলেন, খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দিয়ে নগরবাসীকে অভিশাপমুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব জায়গায় বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর দখলদারী ছিল। স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি করায় সাধারণ মানুষ বিরক্ত ক্ষুব্ধ ও জিম্মিদশার মধ্যে ছিল।

এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, কারা ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আমরা জানি না, তবে একটি মহল খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার জানামতে ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলো আগে যাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে।

এদিকে দখলের রাজনীতি বরদাশত করা হবে না জানিয়ে খোকন সেরনিয়াবাত গণমাধ্যমকে বলেন, এরইমধ্যে সবাইকে সতর্ক হতে নির্দেশ দিয়েছি। কোনোমতেই দলে বিশৃঙ্খলাকারীদের জায়গা হবে না।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।