নওগাঁয় এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদচেষ্টার অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৯:১৫ পিএম, ২৮ মে ২০২৩

নওগাঁয় ব্যক্তিমালিকানা জমি থেকে সাইনবোর্ড ও বেড়া সরিয়ে নিতে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২৩ মে) শহরের চকপাথুরিয়া এলাকায় গিয়ে জমির মালিক আজিজুল হককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৫ মে) জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আজিজুল হক।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ শহরের চকপাথুরিয়া এলাকায় ১৮ শতক জমি কবলা দলিলমূলে দীর্ঘ সময় ধরে ভোগদখল করে আসছিলেন চকবিরাম এলাকার মৃত মির বক্স সরদারের ছেলে আজিজুল হক। কয়েক বছর আগে ওই এলাকায় ‘নওগাঁ মডেল টাউন’ নামে একটি আবাসিক এলাকা নির্মাণের উদ্যোগ নেন সদর উপজেলার দশপাইকা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস। আজিজুল হকের জমিটি নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন। এজন্য জমিটি তার আবাসিক এলাকায় প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহারের জন্য ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ এবং ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল পৃথক দুটি চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেন আব্দুল কুদ্দুস। শর্তানুসারে জমিটি নামজারি বা খারিজ করার ১৫ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রি দলিল করে চুক্তিমূল্যে কিনে নেওয়ার কথা তার।

পরে আজিজুল হক জমিটি খারিজের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় একটি বাটোয়ারা মামলার রেফারেন্স টেনে জমিটি খারিজের আবেদন বাতিলের উদ্দেশ্যে মিস কেস করান আব্দুল কুদ্দুস। জমিটির একই দাগে থাকা ১৪ শতক খাস সম্পত্তি আছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে ওই ১৪ শতক খাস সম্পত্তি জমিটির কোন অংশে আছে তা সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণের জন্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন আজিজুল। আজিজুলের পক্ষে মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় জুয়েল রানা নামের এক যুবককে।

jagonews24

চলতি বছরের ৯ মে ওই জমির ওপর স্থিতিবস্থার আদেশ দেন আদালত। আদালত নিষেধাজ্ঞা দিলে জমিটির ওপর আদেশ সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন আজিজুল।

ভুক্তভোগী আজিজুল হক বলেন, ‘আমার জমি ব্যব্হারের জন্য মডেল টাউনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে চুক্তি ছিল তিনি আমাকে ৩০ লাখ টাকা এবং আবাসিক এলাকার মধ্যে দুটি প্লট দেবেন। প্লটে বাড়ি নির্মাণের সময়ও ৩০ লাখ টাকা দেবেন। কিন্ত শর্ত ভঙ্গ করার কারণে আমার জমি এখন কুদ্দুসকে ব্যবহার করতে দিচ্ছি না। আমার জমিতে সাইনবোর্ড ঝুলানোর পর ২২ মে বিষয়টি সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলামকে জানাই। এর একদিন পরই তিনি হাজির হয়ে সাইনবোর্ড এবং বেড়া দ্রুত অপসারণে জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। নিজের সম্পদ রক্ষায় বাধ্য হয়ে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি।’

নওগাঁ মডেল টাউনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘তার (আজিজুল হক) সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল জমি দিতে পারলে তাকে প্লট ও টাকা দেওয়া হবে। চুক্তির সময় তাকে ৩০ লাখ টাকাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার জমি আমাকে বুঝিয়ে দিতে না পারায় প্লট দেওয়া হয়নি। বরং যে কাগজমূলে জমি দিতে চেয়েছিলেন সেখানে মাত্র ১ শতাংশ জমি আছে। এখানে আমি নিজেই প্রতারিত হয়েছি।’

এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই জমির ওপর বাটোয়ারা মিস কেস মামলা রয়েছে। তারা উভয় পক্ষ ব্যক্তিগত জমি নিয়ে কীভাবে আপস মীমাংসা করবেন সেটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। সেখানে আমাদের ১৪ শতাংশ সরকারি জমি আছে। তা শনাক্ত করতে মাপজোক করতে যাওয়া হয়েছিল। তারা (আজিজুল হকসহ তার ভাই) তাদের জমি এবং আমরা সরকারি জমি বের করে নেবো। কিন্তু আজিজুল হকরা বাধা দেওয়াসহ আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। সেখানে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব বা হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়নি।’

নওগাঁ জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আব্বাস আলী/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।