বান্দরবানে ভয়ে পাড়া ছেড়েছে আরও ১১ পরিবার

নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে বান্দরবানের রুমা উপজেলা থেকে পাড়া ছেড়েছে আরও ১১ পরিবার। থানচি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে তারা।
রোববার (২৮ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিদ্যালয়ে আসেন ১১ পরিবারের ৩২ সদস্য। আশ্রয় নেওয়া সবাই রুমা উপজেলা ৩ নম্বর রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাকলাই পাড়ার বাসিন্দা।
আশ্রয় নেওয়া বাকলাই পাড়ার কারবারি (পড়া প্রধান) থংলিয়াত বম বলেন, আমাদের পাড়াতে মোট ৩৭ পরিবার ছিল। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানের ছয়মাস আগেই ২৬ পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। আমরা ১১ পরিবার কোনোরকমে নিজ ভিটেমাটি আঁকড়ে ছিলাম। পুরুষরা দিনের বেলা পাহাড়ের জুম ঘরে পালিয়ে থাকতো। রাতে বউ-বাচ্চাদের রান্না করার খাবার নিয়ে আবার চলে যেত জুমে অথবা জঙ্গলে।
থংলিয়াত আরও বলেন, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২৩ মে পর্যন্ত ভয়-আতঙ্কের মধ্যে অনাহারে-অর্ধাহারে নির্ঘুম সময় পার করছিলাম। আমরা আমাদের কষ্টের কথা রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। নিরুপায় হয়ে জীবনের করুণ পরিস্থিতির কথা উপজেলা প্রশাসনকে জানাই। থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থানচি সদরে আসার পরামর্শ দেন। আমরা বউ-বাচ্চা, নাতি-নাতনিদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে থানচিতে চলে আসি।
আশ্রয়কেন্দ্রে আসা একই পাড়ার রোলরেম বম (৫৩) বলেন, আমাদের সব পরিবারের গৃহপালিত হাঁস মুরগি, গরু ছাগল, গয়াল, শুকর, ধান, ঘরবাড়ি সব রেখে জীবন বাঁচানোর জন্য, থানচি সদর প্রশাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া আশ্রয় শিবিরে এসেছি। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এখনে রাখার জন্য আবেদন করছি।
আশ্রয় শিবিরে আসা বাকলাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাওরামতং বম বলেন, গত বছরের অক্টোবর থেকে এলাকার পরিস্থিতি খুবি খারাপ। সেই থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত স্কুলও বন্ধ আছে। খুব কষ্টে জীবন-যাপন করতে হয়েছে আমাদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো সময় বাড়িতে আবার কোনো সময় জঙ্গলে রাত কাটাতে হয়েছে। অবশেষে এ আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে বাধ্য হয়েছি।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. আবুল মনসুর জাগো নিউজকে বলেন, শনিবার রুমা উপজেলার কয়েকটি পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য যোগাযোগ করে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে।
ইউএনও আরও বলেন, সবাই রুমা উপজেলার বাসিন্দা হলেও নিরাপদ দূরত্ব ও যোগাযোগ সুবিধার কারণে তারা থানচিতে আশ্রয় চেয়েছেন।
মানবিকতার কারণে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক থানচি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়ের এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করেছি। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা আশ্রয়ে থাকতে পারবেন।
নয়ন চক্রবর্তী/এসজে/জিকেএস