কুড়িগ্রামে নদীভাঙন

যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হবে একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকটি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৩:৫৩ পিএম, ২৯ মে ২০২৩

কুড়িগ্রামে উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ১৬টি নদীতে মৃদু ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ বেশ কয়েকটি নদ-নদীর তীরবর্তী মানুষ বসতভিটা ও ফসলি জমি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙনরোধের চেষ্টা করলেও রক্ষা পাচ্ছে না স্কুল, মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। হুমকির মুখে রয়েছে এলাকার একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে জেলার উলিপুর, চিলমারী ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বসতভিটা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরভগবতীপুরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে চরভগবতীপুরে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে চরভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকসহ আশপাশের ৪টি গ্রাম।

স্থানীয়রা জানান, নদীর পানি বন্যায় পরিণত হওয়ার আগেই যেভাবে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে, আসন্ন বন্যায় এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে নদীশাসন চান এলাকাবাসী।

jagonews24

চরভগবতীপুরের কৃষক মো. নুর ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহে আমার দুই বিঘা আবাদি জমি নদীতে চলে গেছে। এখনো বন্যা আসে নাই এতেই যে ভাঙনের অবস্থা, জানি না কপালে কী দুঃখ আছে।

চরভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে অনেক জমি-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকটি ভাঙনের মুখে। গতকাল ক্লিনিকটির স্থাপনা নিলামে তোলা হয়েছিল। সরকারি সিডিউল অনুযায়ী মূল্য না ওঠায় বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। আজ যে অবস্থা দেখছি যেকোনো মুহূর্তে ক্লিনিকটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ক্লিনিকের ভেতরের সব আসবাবপত্র ও ওষুধ অন্য জায়গায় নিয়েছি। অস্থায়ীভাবে সেখানে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা গেলো না। আবার কবে ওই চরে ক্লিনিকের স্থাপনা হবে জানি না। তবে অস্থায়ীভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

jagonews24

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর মিয়া বলেন, নদীভাঙনে চরভগবতীপুরে প্রায় ৩৬টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমরা বসতভিটা হারানো পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করছি। কাল-পরশুর মধ্যে উপজেলা প্রশাসন বরাবর তালিকা জমা দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মাণ করা একটি মাধ্যমিক স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। একটি কমিউনিটি ক্লিনিক সেটাও ভাঙনের মুখে। এই ক্লিনিক হারালে এ অঞ্চলে আবার কবে মানুষজন ক্লিনিক পাবে আল্লাহ জানে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়ছে। তবে মাত্রা কম। চরাঞ্চলে কিছু ভাঙন রয়েছে। ভগবতীপুরে চরের ভাঙন প্রতিরোধে অস্থায়ী কার্যক্রমের জন্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে সেখানে ওই মূল্যমানের স্থাপনা ও সম্পদ নেই। তারপরও আমরা ভাঙনরোধে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।

ফজলুল করিম ফারাজী/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।