ঝড়ে উড়ে গেছে স্কুলের চালা, গাছতলায় চলে ক্লাস

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ০৬:২৭ পিএম, ০৭ জুন ২০২৩

একটি বাঁশের মাথায় উড়ছে জাতীয় পতাকা। তার পেছনেই স্কুলভবন। তবে স্কুলভবনটির চালা না থাকায় পাশের আম গাছের ছায়ায় বসে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। প্রায় আট মাস এভাবে পাঠদান চলছে জাদুড়িয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার জাদুড়িয়া গ্রামের নারিকেলবাড়িয়া সড়কের পাশে স্কুলটির অবস্থান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশপাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় এই জাদুড়িয়া গ্রামের ছোট ছোট শিশুদের যেতে হতো অনেক দূরের স্কুলে। এজন্য স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় ২০০৮ সালে গড়ে ওঠে এই বিদ্যালয়টি। বর্তমানে এখানে পাঁচজন শিক্ষক রয়েছে। শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৭৬ জন। প্রতিদিন দুটি শিফটে ভাগ করে চলে পাঠদান। শিক্ষার্থী উপস্থিতিও ৯৫ শতাংশের মতো। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিনা বেতনে নিয়মিতই পাঠদান করছেন।

jagonews24

শিক্ষার্থীদের সরকারি পাঠ্যবই দেওয়া হচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মেই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। সব কার্যক্রম ঠিকমতো চললেও আট মাস আগে ঝড়ে বিদ্যালয়ের টিনের চালা উড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় জানালা-দরজাসহ অন্য আসবাবপত্র। এরপর থেকেই খোলা আকাশের নিচে, ঝড়-বৃষ্টির সময় কখনো বা অন্যের কাচারিঘরে পাঠদান করানো হয়।

এদিকে, বিদ্যালয়টির ভবনে টিনের চালা ও আসবাবপত্র না থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে বেড়ে উঠেছে ঘাস। এত সংকটের মধ্যেও শিক্ষার্থীরা আগ্রহের সঙ্গে আসছে স্কুলে, সানন্দে শিক্ষকরাও পাঠদান করছেন।

জাদুড়িয়া গ্রামের জাকির মোল্লা বলেন, আমাদের গ্রামের কাছাকাছি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিশুদের অনেক দূরে পাঠাতে হতো। কিন্তু গ্রামের মধ্যে এই বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠার পর এলাকার অনেকেই পড়াশুনা করছে। তবে কিছুদিন আগের ঝড়ে বিদ্যালয়ের টিনের চালা উড়ে যাওয়ার কারণে মাঠের আম গাছ তলায় বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।

জাদুড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া খাতুন বললো, আগে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতাম। এখন খোলা জায়গা আমগাছের নিচে বসে ক্লাস করি। খুবই কষ্ট হয় আমাদের।

অপর শিক্ষার্থী তারফিন হোসাইন জানায়, নিয়মিত স্কুলে আসি। কিন্তু খোলা জায়গা ক্লাস করতে কষ্ট হয়।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের স্কুলের টিনের চালা ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে ঝড়ে টিন উড়ে চলে যায়। বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের তো পড়াতে হবে এজন্য আমরা গাছ তলায় তাদের ক্লাস নিচ্ছি।

তিনি বলেন, এখানে ক্লাস নেওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যে এখানে ক্লাস নেওয়ার সময় গাছ থেকে আম পড়ে। কিছুদিন আগে গাছে মৌমাছির চাক ছিল, সেজন্য অনেক সমস্যা হয়েছে। বৃষ্টির সময় তো খুবই কষ্ট হয়। বৃষ্টি যতক্ষণ হয় ততক্ষণ আমরা ক্লাস নিতে পারি না।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বপ্না পারভীন বলেন, আমরা বিনা বেতনে পাঠদান করে যাচ্ছি। কেবল সরকারনির্ধারিত হারে শিক্ষার্থীদের থেকে ফিস নেওয়া হয়। বাকি সব খরচ আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে করি। তবুও আশায় আছি, যদি কখনো স্কুলটি সরকারিকরণ হয় তাহলে সুবিধাদি পাবো। তবে আমাদের পাঠদানে কোনো ঘাটতি নেই।

জাদুড়িয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল আক্তার বলেন, ছাদ নষ্ট হওয়ার পর এভাবেই কষ্ট করে পাঠদান করা হচ্ছে। আমাদের আর্থিক সংকটের কারণে মেরামত করতে পারছি না। শিক্ষা বিভাগ বা কেউ যদি সহযোগিতা করে তাহলে বিদ্যালয়টি মেরামত করে আবার শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবে শিক্ষার্থীরা।

jagonews24

তিনি বলেন, সরকারিকরণের প্রয়োজনীয় সব শর্তই পূরণ আছে। শিক্ষা অফিসে আবেদনও দেওয়া আছে। বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হলে আমরা বেতন-ভাতাসহ অন্য সব সুবিধা পাবো। তাই সরকারের কাছে দাবি থাকবে বিদ্যালয়টি যেন সরকারিকরণে উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার হামিদুল ইসলাম বলেন, একটি স্কুল সরকারিকরণ হতে হলে ২০১২ সালের মধ্যেই সরকারের নামে ৩৩ শতক জমির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন, একজন প্রধান শিক্ষক ও চারজন সহকারী শিক্ষক থাকাসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী ও তাদের উপস্থিতি থাকতে হবে। এসব শর্তই জাদুড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে সরকারিকরণ হয়নি বিদ্যালয়টি। কিন্তু পরবর্তীকালে সরকার যদি বেসরকারি স্কুল সরকারিকরণের উদ্যোগ নেয় তখন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে এই স্কুলটি হয়তো সরকারিকরণ হতে পারে।

তিনি বলেন, তবে স্কুলটি সরকারি না হওয়ায় মেরামতে আমরা উদ্যোগী হতে পারছি না। সেক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজন উদ্যোগ নিলে দ্রুতই বিদ্যালয়টি মেরামত হতে পারে।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।