কোরবানির ঈদ ঘিরে পাহাড়ের কামারশালায়ও বেড়েছে ব্যস্ততা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ১০:৪৬ এএম, ২৫ জুন ২০২৩

পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। কোরবানির পশু কেনার পাশাপাশি সমান তালে চলছে দা, বটি, ছুরি, চাপাতি শান দেওয়ার কাজ। অনেকে আবার নতুন ছুরি-বটি কিনতে ছুটছেন কামারশালায়। ফলে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত টুং টাং শব্দে মুখরিত পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির কামারপট্টির দোকানগুলো।

বছরের অন্য সময় কামাররা অলস সময় পার করলেও ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসলে তাদের যেন দম ফেলার ফুসরত থাকে না। ফলে ব্যস্ততা বেড়েছে এ পেশার লোকদের। দোকানগুলোতে কেউ লোহা আগুনে গরম করছেন, কেউ বা লাগাচ্ছেন হাতল, আবার কেউ তৈরি হওয়া জিনিসে ধার দিচ্ছেন। আবার কাজ শেষে সেগুলো বুঝিয়েও দিচ্ছেন মালিকদের হাতে। এভাবেই চলছে কামারশালার ব্যস্ততা। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির বিভিন্ন কামারশালা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

নতুন দা, বটি ও ছুরির দাম বাড়ায় ক্ষোভ জানিয়ে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, সবকিছুর দামই দ্বিগুণ হয়েছে। তাই নতুন তৈরি না করে পুরোনো ছুরি-বটি শান করিয়ে নিচ্ছি। একাজেও আগের তুলনায় অনেক বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে।

jagonews24

সিরাজুল ইসলাম নামে একজন বলেন, আগের ছুরি ও দা পুরোনো হয়ে গেছে। যার জন্য নতুন কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় আপাতত পুরোনো সরঞ্জামে শান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

কামারশালায় কথা হয় অনিক কর্মকার ও মিঠুন কর্মকারের সঙ্গে। তারা জানান, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে লোকজন তাদের দোকানে ভিড় করছেন। কেউ কেউ পশু জবাইয়ের জন্য নতুন ছুরি, চাপাতি কিনতে আসছেন। আবার কেউ কেউ পুরোনো সরঞ্জামাদি শান দিতে আসছেন। ঈদের দুই-একদিন আগে কাজের চাপ আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তারা।

মিঠুন বলেন, এখানে পুরোনো সরঞ্জামাদি ধার দেওয়া ছাড়াও অনেকেই নতুনভাবে তৈরি করে নিচ্ছেন। কেউ বা রেডিমেড কিনে নিচ্ছেন। তবে পুরোনো সরঞ্জামাদি ধার করানোর সংখ্যাই বেশি।

নতুন সরঞ্জাম বা পুরোনো দা-বটি ধার দেওয়ায় গতবারের চেয়ে বেশি মজুরি নেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে প্রিয়তোষ কর্মকার বলেন, কয়লা আর লোহার দাম বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুরই দাম বেড়েছে। তবে আমরা সহনীয় পর্যায়ে দাম নিচ্ছি। তবে দা, বটি, ছোরা এসবের আকারভেদে দামের পার্থক্য রয়েছে।

৪০ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত রতন কর্মকার বলেন, ঈদুল আজহা এলেই বেচাবিক্রি ও ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ১১ মাস অলস সময় কাটালেও এখন বেশ কাজের চাপ বেড়েছে।

jagonews24

তবে এ পেশায় আগের মতো চাপ বা রুজি কোনোটাই নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে আছি।

এদিকে একাধিক কামারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত স্প্রিং ও লোহা ব্যবহার করে হাসুয়া, দা, বটি, ছুরি, চাপাতিসহ অন্য সরঞ্জাম তৈরি করা হয়। স্প্রিং দিয়ে তৈরি সরঞ্জামের মান ভালো, তাই দামও বেশি। আর লোহার তৈরি সরঞ্জামের দাম তুলনামূলক কম।

পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, দা ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৪০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং চাপাতি ৫৫০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।