একটি রাস্তার অভাবে দুর্ভোগে ৪০ পরিবার

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী আয়শা সিদ্দিকা আকাশী , জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০৮:৩৯ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৩

একটি রাস্তার অভাবে প্রায় ৪০টি পরিবারের চলাচলে ভয়াবহ দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় ওই পরিবারগুলোর শিশুরা ঠিকমতো স্কুলেও যেতে পারে না। এমনকি কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়া বা প্রয়োজনীয় বড় কোনো জিনিসপত্রও ঘরে নিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার আলমদস্তার এলাকার সুফি জোনাবালী সড়ক সংলগ্ন বাসিন্দাদের এ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজৈর পৌরসভার আলমদস্তার এলাকার সুফি জোনাবালী সড়ক সংলগ্ন প্রায় ৪০টি পরিবার একটি রাস্তার অভাবে দুর্বিষহ দিন পার করছে। একটু বৃষ্টি হলেই চারদিকে পানিতে ভরে যায়। তাছাড়া পানি নিষ্কাশনেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই অন্য সময় কোনোভাবে পার হলেও বর্ষার সময় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পরিবারগুলোকে।

তাছাড়া মূল রাস্তায় যেতে একটি বাড়ির লোহার গেট দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এতে করেও পড়তে হয় নানা সমস্যায়। ওই বাড়ির বাসিন্দারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মাঝেমধ্যে গেটে তালা দিয়ে রাখেন। এতে করেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পরিবারগুলোকে।

স্থানীয়রা জানান, সাবেক মেয়র ২০১৮ সালে এই পরিবারগুলোর জন্য ইট বিছিয়ে ছোট একটি রাস্তা করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মূল রাস্তায় ওঠার মুখে একটি জমির মালিকের বাধার কারণে সেটি আর করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া বর্তমান মেয়রও একাধিকবার চেষ্টা করে সেটির কোনো সমাধান করতে পারেননি।

স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মো. জিয়াদ বললো, একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পর্যন্ত পানি হয়ে যায়। সেসময় ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারি না। তখন স্কুল যাওয়া বন্ধ করতে হয়। তাই এখানে একটি উঁচু রাস্তা দরকার।

আরেক ছাত্র ইয়ামিন বললো, বৃষ্টি হলেই চারদিকে পানিতে ভরে যায়। তখন আমরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারি না। তখন স্কুলে যেতে হলে লুঙ্গি বা গামছা পরে প্রধান সড়ক পর্যন্ত যেতে হয়। সেখানে গিয়ে ড্রেস পরে স্কুলে যাই। তাই আমাদের জরুরিভাবে একটি রাস্তা দরকার।

স্থানীয় এক বৃদ্ধা বলেন, এখানে রাস্তা খুব জরুরি। রাস্তার মুখের একপাশে আবুল হোসেন হাওলাদার ও আরেকপাশে অশোক ডাক্তারের বাড়ি। তারা কেউ রাস্তা দিতে রাজি হননি। তবে আবুল হোসেন হাওলাদার তার ব্যক্তিগত পারিবারিক রাস্তা দিয়ে হাঁটতে দেন। কিন্তু বড় ধরনের মালামাল আনতে দেন না। এ নিয়ে প্রায় ঝগড়াঝাঁটি হয়। তখন তারা গেটে তালা দেন। এতে করে আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয় সেলিনা বেগম বলেন, আমাদের পরিস্থিতি খুব খারাপ। যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে ভরে যায়। পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা নেই। এখানে কোনো ভ্যান আসতে পারে না। তাই জরুরিভাবে কোনো রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া যায় না। এমনকি চালের বস্তাসহ ভারী কোনো জিনিসপত্র নিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাস্তার মুখে কোনো জায়গা নেই। কেউ দিতেও চান না। তাই আমাদের সমস্যা দীর্ঘদিনেও সমাধান হচ্ছে না।

বৃদ্ধ মো. ওহেদ বলেন, এখানে বাড়িঘর তুলছি। কিন্তু কোনো রাস্তা নির্মাণ হয়নি। রাস্তার মুখে যার যার জায়গায় বিল্ডিং তুলে রেখেছে। আমাদের জন্য কোনো জায়গা ছাড়েনি। তাই আমরা রাস্তাও নির্মাণ করতে পারছি না।

গৃহবধূ জেসমিন আক্তার বলেন, বৃষ্টি নামলে পানিতে ভরে যায়। তখন বাড়ির ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারি না। এখানে রাস্তা হলে আমাদের ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারতো। এখানকার পানি সরানোর ব্যবস্থা নেই।

আরেক গৃহবধূ লিপি আক্তার বলেন, এখানে রাস্তা খুব জরুরি। আমি অন্তঃসত্ত্বা। প্রায়ই ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। রাস্তা না থাকায় যেতে খুব সমস্যা হয়।

রাস্তার মুখের জায়গার মালিক আবুল হোসেন হাওলাদারের ছেলে লতিফ হাওলাদার বলেন, এটা আমাদের ব্যক্তিগত জায়গা। আমার বাবা জায়গাটি কিনেছেন। এখানে আমরা চার ভাই বাড়ি করবো। এরইমধ্যে দুই ভাই সামনে বাড়ি করেছি। পেছনে বাকি দুই ভাই বাড়ি করবেন। তাই পারিবারিকভাবে রাস্তার জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। কিন্তু পেছনের সব মানুষ এখান দিয়ে হাঁটেন। আমরা মানবিক কারণে এখান দিয়ে হাঁটতে দিচ্ছি। কিন্তু এই হাঁটতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলেই পেছনের মানুষজন আমাদের মারতে আসে।

তিনি বলেন, মেইন গেটের তালা খোলা রাখার জন্য আমার বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েদের এবং ঘরের বউদের কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রায় সময় শিশুরা কাউকে না বলেই রাস্তায় চলে যায়। আমাদের চিন্তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এতে করে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। তাছাড়া সাবেক মেয়র আমার বাড়ির পেছন দিয়ে রাস্তা বের করতে চেয়েছিলেন। আমরা এজন্য কিছু জমিও দিয়েছি। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী কোনো জমি না দেওয়ায় রাস্তা বের করা সম্ভব হয়নি।

রাজৈর পৌরসভার মেয়র নাজমা রশিদ বলেন, আমি সেখানে রাস্তার বিষয়ে একাধিকবার গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রধান রাস্তার মুখে জমি নিয়ে জটিলতার জন্য নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। আবারও সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো। যাতে ওই পরিবারগুলো একটু ভালোভাবে চলাচল করতে পারে।

এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।