আরডিএর ফাইলবন্দি সিটি সার্ভিস

সাখাওয়াত হোসেন
সাখাওয়াত হোসেন সাখাওয়াত হোসেন , জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৮:০৭ এএম, ২৬ আগস্ট ২০২৩

রাজশাহী নগরীতে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার একচ্ছত্র দাপট। রাজশাহী সিটি করপোরেশন লাইসেন্স দেওয়ার পর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে তিন চাকার এ পরিবহন। বিশেষ করে সড়কে দুর্ঘটনা ও যানজটের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে অটোরিকশা।

রাজশাহী মেট্রাপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ২০০৪-২০২৪ এ সিটি বাস সার্ভিস চালুর কথা রয়েছে। তবে নগর বাস সার্ভিস এখনো আলোর মুখ দেখেনি। বরং ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে বিশেষ এ পরিকল্পনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। ২০০৪ সালে প্রথম মাস্টারপ্ল্যানের অধীনে ৩৬৫ কিলোমিটার রাজশাহী মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (আরএমডিপি) ২০০৪-২০২৪ প্রণয়ন করা হয়। পরে সরকারি অনুমোদনক্রমে ২০০৫ সালে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়, যেটি চার স্তরবিশিষ্ট পরিকল্পনা।

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে চালুর একদিন পরই বন্ধ হলো সিটি সার্ভিস

পরিকল্পনার যোগাযোগ খাতে বলা হয়েছে, রাজশাহী নগরজুড়ে বাস সার্ভিস চালু করতে হবে। তবে আরডিএ, রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএর পাল্টাপাল্টি দোষারোপের কারণে এখনো আলোর মুখ দেখেনি সিটি বাস সার্ভিস।

গত বছরের ২৯ আগস্ট ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে অটোরিকশা ধর্মঘট ডাকে মালিক সমিতি। এতে বেশ ভোগান্তিতে পড়েন রাজশাহীবাসী। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে রাজশাহীতে সিটি সার্ভিস বাস চালু করা হয়। সিটি সার্ভিস বাস চালু হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এ সার্ভিস। তবে অটোরিকশার আন্দোলন স্থগিতের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় বাস সার্ভিস।

নগরবাসী বলছেন, রাজশাহীতে অটোরিকশার কারণে দিন দিন যানজট বাড়ছে। এটি নিরসন ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে রাজশাহীতে আবারও বাস সার্ভিস চালু করা দরকার।

রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজারের বাসিন্দা আব্দুস সালাম। তিনি প্রতিদিন অফিসে যান অটোরিকশায়। আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অটোরিকশা আগের মতো নেই। তারা রাস্তায় যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যায়। প্রশিক্ষিত চালকও নেই। ফলে ঝুঁকি নিয়েই আমাদের চলতে হয়। আমি নিজেও কয়েকবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি।’

আরও পড়ুন: টাউন বাসে কমবে যানজট, হবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়

তিনি বলেন, ‘নগরীর রাস্তা অটোরিকশায় ছেয়ে গেছে। পা ফেলার জায়গা থাকে না। রাজশাহীতে এখন বাস সার্ভিস চালু হলে কম খরচে আমরা নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো। এতে যানজটও কমবে।’

রাজশাহীর রেলগেট এলাকায় অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সেলিম রেজা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজশাহীতে অটোরিকশা ছাড়া কিছু নেই। গত পাঁচ বছরে নগরীর রাস্তাঘাটের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু অটোরিকশার বিকল্প কিছু আসেনি। আমাদের নগরপিতার উচিত আধুনিক শহরের মতো রাজশাহীতেও সিটি সার্ভিস চালু করা।’

কথা হয় রাজশাহী সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক টিটোর সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজশাহী নগরীতে অটোর (অটোরিকশা) জন্য রাস্তা পার হওয়া দায়। সেখানে বাস চালাবো কোথায়? আমরাতো বাস চালাতেই চাই। আমাদের ৪-৫ জন মালিক এসি বাস চালাতে চান। কিন্তু অটোর জন্য আমরা সেটা করতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আরডিএর মাস্টারপ্ল্যানে বাস সার্ভিসের কথা আছে। কিন্তু তারা আমাদের এ বিষয়ে কিছুই জানাননি। তারা যদি এক ধাপ এগোয় আমরা দুই ধাপ এগোবো। আমরা চাই মানুষকে ভালো সেবা দিতে। নগর কর্তৃপক্ষ ও বিআরটিএ যদি আমাদের অনুমতি দেয় তাহলে আমরা বাস সার্ভিস দিতে প্রস্তুত।’

আরও পড়ুন: অটোরিকশায় আটকা টাউন সার্ভিস

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আহমেদ আল মঈন পরাগ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরাও চাই রাজশাহীতে সিটি সার্ভিস চালু হোক। এটি নিয়ে মাঝে মধ্যে মিটিং হয়। মেয়র নিজেও এটি করতে চান। আগামীতে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি।’

তবে রাজশাহী বিআরটিএর উপ-পরিচালক আব্দুল খালেক বলেন, ‘মাস্টারপ্ল্যানে সিটি সার্ভিস চালুর বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এটির সঙ্গে আমাদের কোনো দায়িত্বও নেই।’

এ বিষয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পক রাহেনুল ইসলাম রনি বলেন, ‘রাজশাহী মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ২০০৪-২০২৪ এ সিটি বাস সার্ভিস চালুর এমন কোনো কথা নেই। যদিও থাকে এটি সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ ও সড়ক পরিবহন বাস্তবায়ন করবে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে দাবি করেন আরডিএর চেয়ারম্যান জিয়াউল হক।

বাস সার্ভিস চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সামনাসামনি আসেন। বসে কথা বলতে হবে।’

পরে তিনদিন আরডিএ ভবনে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সেখানে গেলে তিনি বাইরে আছেন বলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানান। সবশেষ শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রাতে তাকে ফোন করা হলে সংযোগ কেটে দেন। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।