বর্জ্য শোধনাগার

মহাসড়কের পাশে ময়লার দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেল ঈশ্বরদীবাসী

শেখ মহসীন
শেখ মহসীন শেখ মহসীন
প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভা প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৪৯ বছর পর ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের ফলে অসহনীয় দুর্গন্ধ ও ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেয়েছে পৌরবাসী। দীর্ঘদিন ধরে পৌর শহরের প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের হারুখালী মাঠ এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার ফলে ওই এলাকায় যে অস্বস্তিকর পরিবেশ ও দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে পথচারীরা মুক্তি পেয়েছে।

জানা যায়, ১৯৭৪ সালের ৮ আগস্ট ঈশ্বরদী শহরের পোস্ট মোড়ে পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয়। ৩১ দশমিক ১০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পৌর এলাকায় ১ লাখ ৩ হাজার ২৯৫ জন বসবাস করেন। ১৯৮৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী পৌরসভা ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ (প্রথম) শ্রেণিতে উন্নীত হয়। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় পৌরবাসীর দুর্ভোগ ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। পৌর কর্তৃপক্ষ ও পৌরবাসী সড়ক-মহাসড়কের পাশে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলতো। এতে সড়কে চলাচলকারীদের দুভোর্গ পোহাতে হতো। এখন শহরের যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে ফেলায় পৌরবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।

পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পের আওতায় জিওপি, এডিবি ও এফআইডির অর্থায়নে পৌর শহরের ফতেহ মোহাম্মদপুর এলাকায় ২০১৮ সালের ১২ জুলাই স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় করা হয় ৪ কোটি ২০ লাখ ২২ হাজার ৩৩১ টাকা। এছাড়া এ প্রকল্পের জন্য ২ দশমিক ৯৭ একর জমি কেনা বাবদ খরচ হয় ১ কোটি ৬৯ লাখ ২১ হাজার ৮৬০ টাকা। ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর এটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল চালু হয়। স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য শোধনাগারে পাম্প হাউজ, সেটেলমেন্ট ট্যাংক, ফিল্টার, পলিশিং, ডাম্প ট্রাক ক্লিনার সেন্টার, কন্ট্রোল বিল্ডিং, অফিস বিল্ডিং রয়েছে। এছাড়া পুরো স্যানিটারি ল্যান্ডফিল এরিয়ার চারপাশে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।

পৌর পৌর শহরের মধ্য অরণকোলা এলাকার হাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করি। যখন এ সড়কের হারুখালী এলাকায় আসি তখন পৌরসভার ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধে বমি চলে আসতো। এছাড়া বৃষ্টির দিনে স্তূপ থেকে ময়লা পানি সড়কে চলে আসতো। আবার যখন ময়লার স্তূপে আগুন জ্বালিয়ে দিতো তখন মহাসড় ধোঁয়ায় একাকার হয়ে যেত। স্যানিটারি ল্যান্ডফিল তৈরির পর এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলেছে।

ঈশ্বরদী পৌরসভার পয়োবর্জ্য পরিদর্শক আলিউজ্জামান রুহেল বলেন, এর আগে পৌরসভার স্থায়ী ভাগাড় বা স্যানিটারি ল্যান্ডফিল না থাকায় মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী ভাগাড়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হতো। অস্থায়ী ভাগাড়ের দুর্গন্ধে মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা প্রায়ই পৌরসভায় অভিযোগ দিতো। তারা মহাসড়কের পাশে থেকে ভাগাড় সরানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এখন স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণ হওয়ায় পৌরসভার নিজস্ব ট্রাক দিয়ে প্রতিদিন ১৪-১৫ টন পয়োবর্জ্য সংগ্রহ করে এখানে ফেলা হচ্ছে।

ঈশ্বরদী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্প থেকে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এখন স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে এবং পৌরবাসীর এতদিনের ময়লার দুর্গন্ধ ছড়ানোর অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়া গেছে। স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে ফেলা পচনশীল বর্জ্য থেকে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতলসহ অন্য জিনিসপত্রগুলো আলাদা করাটা এখন একটি চ্যালেঞ্জ। এটি পুরোপুরিভাবে সফল হলে পচনশীল বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন হবে।

ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা জাগো নিউজকে বলেন, পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী ভাগাড়ে ময়লা-আবর্জনা ডাম্পিং বন্ধ করতে হবে। সড়কের পাশের ভাগাড়ে ময়লা ডাম্পিং করার ফলে দুর্গন্ধ ছড়াতো। এতে সবাই অস্বস্তিবোধ করতো। এখন পৌরসভা আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করেছে। ফলে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হয়েছে।

এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।