বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী তালের ডোঙা

এন কে বি নয়ন এন কে বি নয়ন ফরিদপুর
প্রকাশিত: ১০:৫৯ এএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কালের বিবর্তনে ফরিদপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাল গাছের ডোঙা। নতুন বর্তমান প্রজন্মের কাছে তালের ডোঙা শব্দটি যেন এক অদ্ভুত নাম।

এক সময় জেলার ৯টি উপজেলার অধিকাংশ খাল-বিল, নদী-নালা ও ডোবাতে তালের ডোঙা চোখে পড়ত। অতীতে এ অঞ্চলের গ্রামে বসবাস করা মানুষের জলপথের প্রধান বাহন ছিল নৌকার পাশাপাশি এই তালের ডোঙা। কিন্তু আগের মতো বর্ষা না হওয়ায় তালের ডোঙা এখন আর চোখে পড়ে না। এখন ডোঙার নাম শুনলে হয়তো অনেকে উল্টো প্রশ্ন করবেন এটা আবার কী? অথচ দুই থেকে তিন যুগ আগেও নৌকার পাশাপাশি তালের ডোঙার কদর ছিল।

jagonews24

বোয়ালমারীর বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, কাজের জন্য প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে হয়। এখন বর্ষার দিন। কয়েক মাসের মধ্যে গত শনিবার উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বান্দুগ্রামের বিলে একটি ডোঙা চোখে পড়লো। আর বর্তমান প্রজন্ম ডোঙা কী চেনে না, নামও শোনেনি। এককথায় ডোঙা যেন আমাদের অঞ্চল থেকে প্রায় বিলুপ্ত।

মোড়া গ্রামের অচিন্ত বালা বলেন, আমি অনেক বছর ধরেই একটি ডোঙা ব্যবহার করছি। স্মৃতি হিসেবে এখন টুকটাক ব্যবহার করি। সড়ক যোগাযোগের ব্যাপক উন্নতি হওয়ার সঙ্গে জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় আর ডোঙার দরকার হয় না। তাছাড়া তাল গাছের দাম অনেক বেশি, এখন আর আগের মতো পাওয়াও যায় না।

jagonews24

সালথা উপজেলার সমাজকর্মী ইকবাল মাহমুদ ইমন জাগো নিউজকে বলেন, ১০ গ্রাম ঘুরে দুই-একটি তালের ডোঙা চোখে পড়বে কি না সন্দেহ। পল্লী-গ্রাম থেকে তালের ডোঙা বিলুপ্ত হতে চলেছে।

বামনগাতী গ্রামের গোপেন বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, তালের গাছ দিয়ে তৈরি নৌকাকে আঞ্চলিক ভাষায় ডোঙা বা কোন্দা বলা হয়। মূলত যারা গ্রামে বসবাস করেছে তারা তালের ডোঙাকে মাছ ধরার কাজে এবং বিলে শাপলা, শামুক সংগ্রহ অথবা খাল-বিল পারাপারের জন্য ব্যাবহার করতো। এখন আগের মতো বর্ষাও নেই। ডোঙার মিস্ত্রিও পাওয়া যায় না। তাই ডোঙা নেই বললেই চলে।

jagonews24

বোয়ালমারী উপজেলার টোংরাইল গ্রামের কাঠমিস্ত্রি মঙ্গল শিকারী জাগো নিউজকে বলেন, এক সময় টোংরাইল, সুতালীয়, মোড়া, বন্ডপাশা, তেঁতুলিয়া, কদমী গ্রাম এলাকায় বর্ষার জলে চারপাশ ভেসে যেত। চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা অথবা তালের ডোঙা। এখন বর্ষাও নেই ডোঙাও নেই। তাই এর চাহিদা নেই বলে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন মিস্ত্রিও নেই।

এ বিষয়ে শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমার ইউনিয়নে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। মানুষ আধুনিক হয়েছে। এখন আগের মতো বর্ষা হয় না। শেখর, রুপাপাত, পরমেশ্বর্দী ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলে বর্ষার সময় তালের ডোঙার ব্যবহার ছিল অহরহ। এখন পানি না থাকায় ডোঙার ব্যবহার ও মিস্ত্রিদের পেশা পরিবর্তন হয়েছে। এক কথায় তালের ডোঙা এ অঞ্চল থেকে যেন বিলুপ্তির পথে।

এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।