১২ বার যমুনায় বিলীন বাড়ি
নিঃস্ব হলেও চরেই পড়ে থাকেন আয়েশা
যমুনার বুকে সিরাজগঞ্জের একটি চরের নাম ‘কাওয়াকোলা’। এ চরের ছোট কয়ড়া গ্রামে কদিন আগে বৃদ্ধ স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে দুখানা টিনের ঘরে বসবাস করতেন আয়েশা খাতুন (৬৫)। কিন্তু সেটিও যমুনার স্রোতের তোড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
আয়েশা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের একেবারে নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে যমুনা। তবে এবারই প্রথম না, এমন নিঃস্ব হলেন ১২ বার। তারপরও নাড়ির টানে ছেদ পড়েনি এ বৃদ্ধার। পরিবার নিয়ে বড় কয়ড়া গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন।
নিঃস্ব হয়ে কয়েকদিন ধরে এক কাপড়ে ছিলেন আয়েশা খাতুন। আড়াই দিন উপোসের পর দুমুঠো চাল জোগাড় করতে পাড়লেও ভাতের সঙ্গে খাওয়ার কিছুই খুঁজে পাননি। সাঁতরিয়ে বৃদ্ধ স্বামী-সন্তান নিয়ে অন্যের ভিটায় ঠাঁই নিয়েছেন। কলাগাছের শুকনা খোল কুড়িয়ে রান্না করে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে কোনোমতো বেঁচে আছেন আয়েশা খাতুন।
আরও পড়ুন: ‘ভাঙনের চিন্তায় ঘুমাইতেও ভয় করে’
এভাবে খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে খেয়ে না খেয়ে পড়ে আছেন কেন, জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই চর ছেড়ে আর কই যামু! এহন অন্যের ভিটায় উঠছি। পানি কমলে আবার সেখানে চলে যামু।’
শুধু আয়েশা খাতুন নয়, তার মতো নিঃস্ব হয়েছেন সিরাজগঞ্জের যমুনার চরাঞ্চলের বেশিরভাগ বাসিন্দা। বন্যা তাদের সাজানো সংসার বারবার তছনছ করে দেয়। তাদের থাকে না রাত পোহানোর অবশিষ্ট শেষ সম্বলও।
বড় কয়ড়া গ্রামে দেখা গেলো কয়েকজন মাঝে মধ্যে পানিতে ডুব দিচ্ছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই তারা বলেন, ‘এখানে বাড়ি ছিল, পানিতে ভেসে গেছে। এজন্য খুঁজে দেখছি কিছু আছে নাহি।’
আরও পড়ুন: ৩০ মিনিটে ১২ পরিবারকে নিঃস্ব করলো পদ্মা-
বড় কয়ড়া গ্রামের জেলে জগুর (৬৫) বাড়িটিও বানে ভেসে গেছে। তার উপার্জনের একমাত্র সম্বল ছিল জালটি। সেটিও রক্ষ করতে পারেননি। বিধবা সাজেদা ও সাহেরা খাতুনও বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা তারা পাননি বলে জানান।
কলেজছাত্র ইয়াকুব জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত কয়েকদিনে কাওয়াকোলায় প্রায় দেড় শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে একদম বিলীন হয়ে গেছে। এখন তলিয়ে আছে শতাধিক বাড়িঘর। এখন আমরা পুরোপুরি নিঃস্ব।’
শুধু কাওয়াকোলা চরই নয়, এমন শূন্যহাতে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন জেলার সদর, কাজীপুর, চৌহালী, বেলকুচি ও শাহজাদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ। এসব উপজেলার উঁচু এলাকায় পানি না উঠলেও ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চল। তবে ঘর থেকে পানি নামতে থাকলেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান।
আরও পড়ুন: ‘হামাক তিস্তার ভাঙন থাকি বাঁচান’
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের নির্দিষ্ট তালিকা অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করছি। এজন্য আমাদের কাজের কোনো ত্রুটি নেই।’
কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া মুন্সী জাগো নিউজকে বলেন, নদীতে বিলীন ও নিমজ্জিত ৯০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আরও সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, পানি কমতে শুরু করেছে। এতে অনেকের বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। উজানের ঢলে হঠাৎ করে পানি বাড়তে থাকায় এমন ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছিল।
এসআর/জিকেএস