ইটভাটার আগুনে ঝলসে গেছে ৩০ হেক্টর আমনক্ষেত

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৭:৩৯ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৩

যশোরের বাঘারপাড়ায় ৩০ হেক্টর জমির আমনক্ষেত ইটভাটার আগুনে ঝলসে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনদিন আগেও এ জমির সবুজ ধানক্ষেত বাতাসে দুলছিল। সেই সঙ্গে কৃষকেরও। কিন্তু ইটভাটার আগুনে এসব জমির দেড় শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা মাঠে এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ পেয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

বাঘারপাড়ার দোহাকুলা মাঠের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমিনুর, সোহেল, মিজানুরসহ একাধিক চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ধানক্ষেতের পাশেই ফাইভ স্টার ব্রিকস’ নামে একটি ইটভাটা রয়েছে। এ ভাটায় ইট পোড়ানোর পর ভাটা দ্রুত ঠাণ্ডা করতে ভাটামালিক রোববার রাতে চুলার মুখ খুলে দেন। এতে রাতে ভাটার আগুন ৩০-৪০ হাত উপরে উঠে যায়। এসময় ভাটার উত্তর ও উত্তরপশ্চিম পাশের দুই শতাধিক বিঘা (৩০ হেক্টর) জমির আমন ধানের পাতাসহ গাছ পুড়ে গেছে। কমপক্ষে ১৫০ কৃষকের আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। মাঠের বেশির ভাগ জমিতে গুটিস্বর্ণা ও হাবু ধানের চাষ করেছেন কৃষকেরা।

আরও পড়ুন: দুই ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ঝলসে গেলো শত বিঘা ধানক্ষেত 

উপজেলার দোহাকুলা ইউনিয়নের কৃষক ইকবাল হোসেন জানান, অনেক টাকা খরচ করে ছয় বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। কিছুদিনের মধ্যে ধানের মোচা আসা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এর আগেই পাশের ফাইভ স্টার ইটভাটার আগুন ও ধোঁয়ায় এলাকার সব ক্ষেতের ধান পুড়ে গেছে। আমরা চরমভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছি।

কৃষক বাদশা মিয়া অভিযোগ করে বলেন, তিনি এবার এ মাঠে দুই বিঘা জমিতে হাবু ধান চাষ করেছেন। ইটভাটার আগুনে এতবড় ক্ষতি হলো। ইটভাটা হওয়ার পর থেকে এখানে চাষাবাদে সমস্যা হচ্ছে। তিনি কৃষি জমির পাশ থেকে ইটভাটা উচ্ছেদের দাবি জানান।

ফসলের ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, ইটভাটার আগুনের তাপে দুই শতাধিক বিঘা জমির উঠতি ফসল চলতি আমন মৌসুমের ধানের ক্ষেত পুড়ে গেছে। ধানগাছগুলো লালচে হয়ে পুড়ে গেছে। কোথাও কোথাও শীষসহ পুরো গাছই পুড়ে গেছে। ফলে ওই এলাকার কৃষকরা এবার সম্পূর্ণরূপে আমন ফসল থেকে বঞ্চিত হবেন। এ ঘটনা পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি কর্মকর্তার কাছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শন করেছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে ফাইভ স্টার ব্রিকসের মালিক শাহিন হোসেন বলেন, গত ৭-৮ মাস ধরে ভাটা চলছে। কৃষকের কোনো ক্ষতি হয়নি। হঠাৎ করে মাঠের ধানগাছ লাল হয়ে যাওয়ায় ভাটার দোষ দেওয়া হচ্ছে। ভাটার আগুন-ধোঁয়ায় দুই-এক বিঘা জমির ধান নষ্ট হতে পারে। কিন্তু ২০০ বিঘা জমির ধানগাছতো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইয়েদা নাসরিন জাহান জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে ওই মাঠ পরিদর্শন করেছেন। প্রায় ৩০ হেক্টর জমির ধানক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, ইটভাটার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে (কৃষি কর্মকর্তা) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা তান্নি বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনা তদন্তে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

মিলন রহমান/আরএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।