প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ভাতিজিকে খুন, ১১ বছর পর গ্রেফতার চাচা-চাচি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৫৪ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২৩

কুড়িগ্রামে ৭ বছরের শিশু চম্পা হত্যা মামলার প্রধান আসামি মিন্টু বসুনীয়া ও তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। গাজীপুরের বড়বাড়ি জয়বাংলা থেকে ওই দম্পতিকে আটক করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সকালে তাদের কুড়িগ্রাম আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় উলিপুর থানা পুলিশ।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে উলিপুর থানাধীন দলদলিয়া ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামে আশরাফ ডাক্তারের পুকুরে মিন্টু বসুনিয়া ও মো. চাঁদ মিয়া ওরফে ভগলু (আসামি মিন্টুর আপন বড় ভাই) অন্যান্য সঙ্গীসহ মাটি কাটতে গিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই এলাকার বজরুলের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় মিন্টু বসুনিয়া ও চাঁদ মিয়া বজরুলকে ভাড়ের বাংখুয়া দিয়ে মারপিট করেন। মারপিটের ফলে বজরুল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অতঃপর গুজব সৃষ্টি হয় যে বজরুল মারা গেছেন।

এ ঘটনার দায় থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য এবং প্রতিপক্ষকে পাল্টা মামলায় ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে গ্রেফতার আসামি মিন্টু বসুনিয়া ও তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম পরস্পর যোগসাজোসে অত্যন্ত সুকৌশলে আপন ভাতিজি অর্থাৎ চাঁদ মিয়ার ৭ বছরের শিশু কন্যা চম্পাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বাঁশঝাড়ে মরদেহ ফেলে রাখেন। পরে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে আসামি মিন্টু মিয়াই উক্ত বাঁশঝাড় থেকে চম্পার মরদেহ শনাক্ত করেন।

এ ঘটনায় মামলা হয় প্রতিপক্ষ বজরুলের পরিবারের বিরুদ্ধে। ধৃত আসামিসহ বাদীর লোকজন প্রতিপক্ষ বজরুলের ভাতিজা হাফিজুলকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উলিপুর থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. জাকির উল ইসলাম চৌধুরী মামলাটি তদন্তকালে ঘটনা ভিন্নরূপে মোড় নেয়। তদন্তের এক পর্যায়ে বাদীর আপন ভাই গ্রেফতার আসামি মিন্টু বসুনিয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আসামি মিন্টু বসুনিয়ার বিপক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পান তদন্ত কর্মকর্তা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামি মিন্টু বসুনিয়াকে আদালতে সোপর্দ করেন।

পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা বজরুলের পরিবারকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে মিন্টু বসুনিয়া ও তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগমের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে আসামি মিন্টু বসুনিয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগমসহ দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর আত্মগোপনে ছিলেন।

পরবর্তীতে উলিপুর থানার ওসিসহ একটি চৌকস টিম বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে গ্রেফতারি পরোয়ানামূলে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় গাজীপুর র্যাব-৩ এর সহযোগিতায় আসামিদেরকে গাজীপুর জেলার বড়বাড়ি জয়বাংলা তিন রাস্তার মোড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রুহুল আমীন বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। আসামি প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছেন। ২০১৩ সালের শিশু হত্যা মামলার মূলহোতা দম্পতিকে ১১ বছর পলাতক থাকার পর গ্রেফতার করলো উলিপুর থানা পুলিশ যা সম্ভব হয়েছে সুষ্ঠু পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে।

ফজলুল করিম ফারাজী/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।