তিন মাস ধরে ডুবে আছে স্কুলমাঠ-সড়ক, পানিবন্দি ৩৫ পরিবার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ১১:৪৯ এএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৩

ফরিদপুর পৌরসভার ব্রাহ্মণকান্দা এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে তিন মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে ৩৫টি পরিবার। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মসজিদ প্রাঙ্গণ এবং সড়কের কিছু অংশ পানিতে নিমজ্জিত থাকায় শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের ফলে জলাবদ্ধতা আরও বেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রাহ্মণকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে নিমজ্জিত আছে তিন মাস ধরে। দেখে মনে হয় কোনো ফসলি মাঠ। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অ্যাসেম্বলি বন্ধ। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও কমে গেছে। যারা স্কুলে আসছে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পানি থাকায় খেলাধুলা করতে পারছে না শিশুরা। পানি মাড়িয়ে আসতে গিয়ে অনেক শিশুরা চর্মরোগেও আক্রান্ত হচ্ছে।

এদিকে শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ই নয়, পানিবন্দি অবস্থায় আছে ওই এলাকার অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি পরিবারের শতাধিক মানুষ। বাড়ির ভেতরে পানি, কোনো বাড়ির উঠান আবার কোনো বাড়ির রান্নাঘর পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে। ঘর থেকে বের হলেই পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয়। জুতা-স্যান্ডেল খুলে হাতে নিয়ে পানি মাড়িয়ে সড়কের শুকনো অংশে উঠতে হয় তাদের।

তিন মাস ধরে জলাবদ্ধতা, পানিবন্দি ৩৫ পরিবার

এছাড়া একটি মসজিদের প্রাঙ্গণেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় মুসল্লিদের পানি মাড়িয়ে মসজিদে যাওয়া আসা করতে হয়। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মুসল্লিদের। পাশাপাশি দেড় কিলোমিটারের মতো দৈর্ঘ্যের একটি সড়কের ৫০০ মিটার অংশ পানিতে ডুবে আছে। সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।

ব্রাহ্মণকান্দার বাসিন্দা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রায় মাস তিনেক ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছি। এ এলাকার কমপক্ষে ৩৫টি পরিবার এখনো পানিবন্দি। ঘর থেকে বের হতে গেলে পচা পানি মাড়িয়ে যেতে হয়। ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

তিন মাস ধরে ডুবে আছে স্কুলমাঠ-সড়ক, পানিবন্দি ৩৫ পরিবার

আরেক বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, এটা নতুন নয়। দীর্ঘ ১০ বছরের সমস্যা। বাইপাস সড়ক নির্মাণের পর থেকেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এলাকাবাসী ছাড়াও মুসল্লি ও কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

রওশন আহমেদ নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, এ এলাকায় একটি স্কুল ও একটি মসজিদের সামনের মাঠ পানিতে ডুবে আছে। এছাড়া একটি সড়কের প্রায় ৫০০ মিটার পানিতে নিমজ্জিত। স্কুলে শিক্ষার্থীরা আসতে পারছে না। আসতে যেতে রিকশা লাগে। দরিদ্র ছেলেমেয়েদের স্কুলে আসা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি মাড়িয়ে চলতে গিয়ে অনেক শিশু চর্মরোগেও আক্রান্ত হচ্ছে।

তিন মাস ধরে জলাবদ্ধতা, পানিবন্দি ৩৫ পরিবার

ব্রাহ্মণকান্দা জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল্লাহ মাহফুজ বলেন, তিন মাস ধরে এমন দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদের সামনের অংশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আল আমিন বলে, ময়লা পানি মাড়িয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। অ্যাসেম্বলি বন্ধ। খেলাধুলার কোনো জায়গা নেই। তাই অনেকেই স্কুলে আসছে না।

তিন মাস ধরে জলাবদ্ধতা, পানিবন্দি ৩৫ পরিবার

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুন্নাহার জাগো নিউজকে বলেন, স্কুলের মাঠে প্রায় তিন মাস ধরে পানি। এতে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পানি বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। স্কুলে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী, কিন্তু তাদের উপস্থিতি কমে গেছে। বর্তমানে একশোর মতো শিক্ষার্থী স্কুলে আসে। পানি মাড়িয়ে আসায় অনেক শিক্ষার্থীর পায়ে চর্মরোগ হয়েছে।

ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস জাগো নিউজকে বলেন, ওই এলাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিগুলো বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে জমি কেটে পাইপ দিয়ে পানি অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই জলাবদ্ধতার নিরসন সম্ভব হবে।

এন কে বি নয়ন/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।