কলেজছাত্র আলভীর টং দোকানে মাসে আয় ২৫-৩০ হাজার
![কলেজছাত্র আলভীর টং দোকানে মাসে আয় ২৫-৩০ হাজার](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/tea-1-20231121130739.jpg)
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সৈয়দ সজিবুর আলভী (২৩)। কোনো কাজই যে ছোট নয় সে কথা আরেকবার প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি। নিজের শখের ল্যাপটপ বিক্রি করে দিয়েছেন টং দোকান। বিক্রি করেন হরেক রকমের চা। এতে তার মাসিক আয় ২৫-৩০ হাজার টাকা।
সরেজমিন দেখা যায়, নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী বাধাঁঘাটের সামনে ছোট্ট একটি টং দোকান দিয়েছেন আলভী। সেখানে কেটলি হাতে চা বানাচ্ছেন তিনি। রং চা থেকে শুরু করে তান্দুরি, তেঁতুল, অপরাজিতা, কাশ্মিরি, বুলেট, বিটরুট, তুলসি, বাম্বু, মালাই ও বাদামসহ ২০ প্রকারের চা মেলে তার দোকানে। পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে প্রকারভেদে এসব চা বিক্রি হয় ৫০ টাকা পর্যন্ত।
এর পাশাপাশি লেবুর পিনিক ও সুস্বাদু চিকেন মোমো বিক্রি করছেন আলভী। তার এসব খাবারের স্বাদ নিতে প্রতিদিন তার দোকানে ভিড় করছেন নানান বয়সী মানুষ। খাবারের মান ভালো হওয়ায় প্রশংসা কুড়াচ্ছেন তিনি।
আলভীর দোকানে রয়েছে স্টিকি নোটের ব্যবস্থা। খাওয়ার পর খাবারের মান কেমন ছিল তা লিখে একটি বোর্ডে লাগিয়ে রাখতে পারবেন যে কেউ।
চা ও মোমো বিক্রি করে প্রতিমাসে আলভী আয় করছেন ২৫-৩০ হাজার টাকা। যা দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে তার পড়াশোনা। পাশাপাশি সহযোগিতা করতে পারছেন পরিবারকে।
বাঁধাঘাটের মৌসুমী মেসে থাকা নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স পড়ুয়া সূর্য বলেন, ‘আলভী আমাদের কলেজে পড়ে। সে টং দোকান দিয়ে ব্যবসা করে উপার্জনের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করছে। আমরা তার এ কাজকে শ্রদ্ধা করি।’
একই কলেজের আরেক ছাত্র সমীরণ বলেন, ‘আলভীর বিষয়টি সমাজের জন্য ইতিবাচক। যারা চান লেখাপড়া শিখে চাকরি-বাকরি না পেলে নিজে কিছু করবেন তাদের জন্য আলভী উদাহরণ।’
সাকিব নামের একজন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই টং দোকানে প্রথমবারের মতো মোমো অর্ডার করেছিলাম। মোমোটা ভালো লেগেছে। আমাদের উচিত শুধু চাকরির পেছনে না দৌড়িয়ে আলভীর মতো উদ্যোক্তা হওয়া।’
তরুণ উদ্যোক্তা ও টং দোকানের মালিক সৈয়দ সজিবুর আলভীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে চীনা ভাষা শিখতে নড়াইল থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন আলভী। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি খাবারের দোকানে চাকরি নেন। তবে কাজ ঠিকঠাক করলেও বেতন ঠিকমতো পেতেন না। এরপর ঠিক করেন নিজেই উদ্যোক্তা হবেন। চায়ের দোকান দেবেন। তবে একথা বাড়িতে জানালে কেউ তা মেনে নেননি। শুধু তাই নয়, পরিচিত কেউই বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। তবে কারও কথায় কান না দিয়ে নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে থাকেন আলভী।
২০২২ সালে এক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে ও শখের ল্যাপটপ বিক্রি করে দোকান শুরু করেন। এরপর ঋণ নিয়ে বন্ধুর ধার পরিশোধ করেন। কয়েক মাসের মধ্যে ঋণের টাকাও পরিশোধ হয়ে যায়।
ভবিষ্যতে বড় একটি রেস্তোরাঁ দেওয়ার স্বপ্ন দেখা সৈয়দ সজিবুর আলভী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে বেকারত্ব একটা সামাজিক ব্যাধি। এজন্য নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হওয়া খুবই দরকার। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট কিছু নিয়ে শুরু করলে সামনে ভালো কিছু করা সম্ভব।’
আলভীর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক খান শাহাবুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, এটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো উদ্যোগ। কারণ বর্তমান যে প্রেক্ষাপট, তাতে আসলে লেখাপড়া শিখে চাকরি বা অন্য পেশায় যাওয়ার সুযোগ খুব কম। সেক্ষেত্রে আলভীর উদ্যোগ অনুকরণীয়।
হাফিজুল নিলু/এসআর/জিকেএস