প্রতিদ্বন্দ্বী ৭ প্রার্থীর সমান সম্পদ কবিরের স্ত্রীর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনে আট প্রার্থীর মধ্যে সম্পদে সবচেয়ে এগিয়ে সীমান্তিকের প্রতিষ্ঠাতা ড. আহমদ আল কবির। তার নিজের ও স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অন্য সাত প্রার্থীর চেয়েও দ্বিগুণ। এমনকি তাদের সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার স্ত্রীর।
সিলেটের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এতথ্য পাওয়া গেছে।
এবারের নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আহমদ আল কবির। তিনি সিলেটের সর্ববৃহৎ এনজিও সীমান্তিকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এছাড়া তার নামে সিলেটে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
হলফনামায় আহমদ আল কবির তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন সাত কোটি ৭৯ লাখ ৬ হাজার ৩২৯ টাকার। এরমধ্যে তার স্ত্রীর সম্পদ রয়েছে তিন কোটি ৫৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৭ টাকার। অথচ এ আসনে অন্য সাত প্রার্থীর মধ্যে কারো এত সম্পদ নেই।
হলফনামায় আহমদ আল কবির তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪৯ লাখ ২৫ হাজার ৫২৪ টাকা। এরমধ্যে কৃষিখাতে দুই লাখ; শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত বাবদ দুই লাখ ৪০ হাজার ৩৩৬ টাকা এবং পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শক ইত্যাদি) থেকে আয় ৪৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকা।
হলফনামায় তার নিজের অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন দুই কোটি ৯৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬৭১ টাকার। আর ৪৬ লাখ ৬৫ হাজার ২০৭ টাকার স্থাবর সম্পদ। তার স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন দুই কোটি ৭৯ লাখ ৩ হাজার ৮২৪ টাকা এবং স্থাবর সম্পদ ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ৬২৩ টাকা। তাছাড়া যৌথ মালিকানায় স্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেছেন ৬২ লাখ ৬২ হাজার ৪৮০ টাকা। যার ৫০ শতাংশ মালিক আহমদ আল কবির নিজে এবং বাকি ৫০ শতাংশের মালিক তার স্ত্রী। সবমিলিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সাত কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৮০৫ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, আহমদ আল কবিরের স্ত্রীর নামে তিন কোটি ৫৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৭ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। অথচ ওই আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ সাত প্রার্থীর মোট সম্পদ রয়েছে তিন কোটি ৯৩ লাখ ৯৮ হাজার ২১৯ টাকার। একক হিসেবে আহমদ আল কবিরের স্ত্রীর সমান সম্পদও ওই আসনে অন্য কোনো প্রার্থীর নেই।
সিলেট-৫ আসনের আট প্রার্থীর হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত মাসুক উদ্দিন আহমদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ২৫০ টাকা, জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাব্বির আহমদের ৮৪ লাখ ২৯ হাজার ২৩ টাকা, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের খায়রুল ইসলামের সাত লাখ ৩৫ হাজার টাকা, তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দিন আহমদ শিকদারের ৩৪ লাখ ৫০ হাজার, স্বতন্ত্র হুছাম উদ্দিনের ৮১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৪৬ টাকা, কয়ছর আহমদ কাওছারের ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের বদরুল আলমের এক কোটি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
অঢেল সম্পদের মালিক আহমদ আল কবির হলফনামায় নিজের সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা দেখিয়েছেন ৪৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭১ টাকা। এছাড়া তার সম্পদের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৪৫ লাখ; বন্ড, ঋণপত্র স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার ৬৮ লাখ; পোস্টাল, সেভিংস ও বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৫০ লাখ; বাস, ট্রাক মোটরগাড়ি রয়েছে ৪৪ লাখ, স্বর্ণালংকার এক লাখ ৮০ হাজার, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী সাত লাখ, আসবাবপত্র আট লাখ ও অন্যান্য খাতে আরও রয়েছে ২৬ লাখ টাকা।
এছাড়া স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কৃষিজমি দেখিয়েছেন দুই লাখ ৫৬ হাজার ৬৬৭ টাকার, অকৃষি জমি পাঁচ লাখ ৮ হাজার ৫৪০ টাকার এবং বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট বাবদ ৩৯ লাখ টাকা।
কবির তার স্ত্রীর সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, নগদ এক কোটি ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৮২৪ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এক কোটি ১৫ লাখ; পোস্টাল, সেভিংস ও বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৪৩ লাখ এবং স্বর্ণালংকার দেখিয়েছেন তিন লাখ ৬০ হাজার টাকার। তাছাড়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে স্ত্রীর নামে রয়েছে কৃষিজমি ৪০ হাজার টাকার ও বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ৬২৩ টাকার।
স্ত্রীর সম্পদের বিষয়ে সিলেট-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আহমদ আল কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী অধ্যাপক মমতাজ শামীম সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে কর্মরত। এরআগে তিনি বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। তার আয়ের উৎস চাকরি।’
আহমেদ জামিল/এসআর/জেআইএম