রাজশাহীর কারখানাকে আইসিসির অনুমোদন
এখন থেকে দেশের ব্যাটে খেলবেন বিশ্বের ক্রিকেটাররা
অডিও শুনুন
হুসাইন মোহাম্মদ আফতাব। ডাকনাম শাহিন। তবে সবাই তাকে চেনেন ‘ব্যাটের ডাক্তার’ হিসেবে। যেখানে ব্যাট নষ্ট হয় কিংবা কাস্টমাইজেশন দরকার হয়, সেখানেই ডাক পড়ে তার। এক সময় এই ব্যাট ডাক্তারের পাশে দাঁড়ান বাংলাদেশ দলের দুই ক্রিকেটার। এরপরই গড়ে ওঠে ‘এমকেএস স্পোর্টস’ নামের ব্যাট তৈরির কারখানা। রাজশাহীতে শাহিনের সেই কারখানায় এখন থেকে তৈরি হবে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট ব্যাট। এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ক্রিকেট ব্যাট তৈরির অনুমোদন দিয়েছে তার কারখানাকে। ফলে এখন থেকে বাংলাদেশে তৈরি ব্যাট দিয়ে খেলতে পারবেন বিশ্বসেরা ক্রিকেটাররা।
আইসিসির অনুমোদন পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত সংশ্লিষ্টরা। আর ক্রিকেটাররা বলছেন, এটি যেমন আনন্দের, তেমনি সাশ্রয়ী। ফলে খেলায় আগ্রহ আসবে তরুণদের।
রাজশাহী নগরীর ছোট বনগ্রাম এলাকায় দুই রুমের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন শাহিন। ছেলেবেলায় ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার নেশা ছিল। সেই নেশা থেকে নিজের ও অপরের ব্যাট মেরামতের কাজ করতেন। সেই থেকে শুরু। কারিগরি শাখাতে কাঠের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ ও পড়াশোনা থাকায় কাজটা আরও সহজ হয়ে ওঠে। গত ২৪ বছর ধরে তিনি ক্রিকেট ব্যাট মেরামত, মডিফিকেশন এবং সম্প্রতি ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কাজ করছেন। এর মাঝে ব্যবসায় শিক্ষায় নিয়েছেন উচ্চতর ডিগ্রি।
শাহিন বলেন, ২০২০ সাল থেকে নিজেই ইংল্যান্ড থেকে উইলো কাঠ এনে ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করছেন। এ ব্যাটের চাহিদাও রয়েছে বিপুল। কারণ বিদেশে একটি ব্যাট কিনতে খেলোয়াড়দের লাখ টাকার ওপরে খরচ করতে হয়।
তিনি বলেন, বহুদিন চেষ্টা করে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ভালো উইলো কাঠ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাঠ পাওয়ার আশ্বাস পান। তবে যে পরিমাণ চাহিদা তিনি দেন পান তার অর্ধেক। এরপরই দেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কারখানা খোলেন তিনি। নাম দেন এমকেএস স্পোর্টস। আর এ পথচলায় তিনি পাশে পান জাতীয় দলের খেলোয়াড় ইমরুল কায়েস ও মেহেদী হাসান মিরাজকে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সম্প্রতি আইসিসির কাছে আবেদন করেছিলাম। সেখান থেকে অনুমোদন পেয়েছি। এখন আমাদের তৈরি পণ্যে লোগো ব্যবহার করতে পারবো। এটি যে কতোটা গর্বের বিষয়, বলে বোঝাতে পারবো না। এখানে অনেক আবেগ লুকিয়ে আছে। ২৪ বছরের স্বপ্ন এখন সার্থক হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করবো। এখন ধীরে ধীরে প্যাড, বল ইত্যাদি তৈরি করবো।
শাহিন বলেন, এখন থেকে আমাদের তৈরি ব্যাট অর্থাৎ মেড ইন বাংলাদেশ লেখা ব্যাটে খেলবে অনেকে। এটি একটি গর্বের বিষয়। ভারতে এসএসএফ ৬০ বছর ও এসজি প্রায় ৯০ বছর ধরে নির্মাণ করে আসছে। তবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এটি করতে পারেনি। বর্তমানে আমরা করছি। ২৪ বছরের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আজ।
তিনি বলেন, ব্যাট ডাক্তার থেকে নির্মাতা হয়েছি। আসল কথা অনেক আগে থেকেই আমার প্যাশন ছিল। কাজ করতে ভালো লাগতো। আমি ২০টি বছর ফ্রি কয়েকজন ন্যাশনাল টিমের প্লেয়ারের ব্যাটের কাজ করেছি। এগুলো সব আমার টাকায় মেরামত করতাম। এটা একটা আলাদা ভালোবাসা ছিল।
ব্যাট কারখানাটা হয়েছে। আমাদের এখানে মেইন হবে টেনিশ ব্যাট। এর বাইরেও ম্যাচ ব্যাট থাকবে। আমাদের এখানে উৎপাদন হলে ব্যাটের দাম এক তৃতীয়াংশ কমে আসবে। এছাড়াও এখানে নিজের মতো করে নির্মাণ করে নিতে পারবেন। এটি সবথেকে বড় ফ্যাসেলিটি। আগে জাতীয় দলের প্লেয়ার ছাড়া কারখানায় প্রবেশ করতে দিতো না কেউ। আমাদের এখানে সবাই নিজের মতো করে ব্যাট বানিয়ে নিতে পারবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট বলেন, রাজশাহীর ব্যাট কারখানাটি অনুমোদন পেয়েছে, এটি ভালো খবর। তার থেকে বড় খবর হলো এটি আমাদের এখানে উৎপদন করায় খরচ অনেক কমবে। ক্রিকেট একটি ব্যয়বহুল খেলা। এই কারখানার কারণে কিছুটা কম খরচে এখানকার তরুণরা ভালো মানের ব্যাট নিতে পারবে। ফলে তারা খেলায় আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে। অনেকেরই সুযোগ হবে।
তিনি বলেন, মূলত ব্যাটে লোগো ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এটিই বড় খবর। এখন থেকে বাংলাদেশের তৈরি ব্যাটে বিশ্বদরবারে খেলা হবে, তাও আবার সেটি রাজশাহীর। এটি অত্যন্ত আনন্দের।
এফএ/জেআইএম