স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা বন্দরবাজার
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আজির উদ্দিন। সিলেটের রায়নগর এলাকা থেকে সপ্তাহে ২-৩ দিন রাত ৯টার দিকে হেঁটে হেঁটে চলে আসেন বন্দরবাজারে। কাছাকাছি অনেক বাজার থাকলেও তিন-চার কিলোমিটার পথ দূরে আসার উদ্দেশ্য সড়কের পাশের কাঁচাবাজার থেকে কিছুটা কম দামে সবজি কেনা। রাত ১০টার পর বাজার করে নিয়ে যান তিনি।
আজির উদ্দিনের মতো সুযোগ পেলেই নগরীর বাগবাড়ি থেকে বন্দরবাজারে সবজি কিনতে আসেন ৫০ বছর বয়সী আব্দুল হাছিব। তিনিও রাত ১০টার দিকে আসেন এ বাজারে। একইভাবে কিছুটা কম দামে সবজি কিনতে প্রতিদিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার পর ওই কাঁচাবাজারে আসেন নগরীর করিমউল্ল্যাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সাজ্জাদুল করিম।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস হয়ে ওঠা স্বল্প আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা এ কাঁচাবাজার। সড়ক দখল করে বসা এ বাজারের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও একশ্রেণির মানুষের কাছে এটি কিছুটা স্বস্তির জায়গা। কারণ যেখানে মাত্র ১০০ গজ ভেতরে ব্রম্মময়ী বাজারে যে সবজির দাম ৫০ টাকা, সেখানে সড়কে বসা বাজারে ওই সবজি মিলে ৪০-৪৫ টাকায়। যার কারণে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কের পাশে বসা কাঁচাবাজারে মানুষের ভিড় জমে।
এবার ভরা মৌসুমেও সবজির বাজারে স্বস্তি মেলেনি। ২০২৩ সালে বছরজুড়েই লাগামহীন ছিল বাজার। নতুন বছরে এসেও কোনো পরিবর্তন নেই। বাজারে মাছ, মাংস, সবজি কোনোটাতেই স্বস্তি মেলেনি। সরকার বারবার নিয়ন্ত্রণের কথা শোনালেও বাস্তবচিত্র উল্টো।
পাশের সবজির বাজারে দেখা যায়, টমেটো প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতিকেজি ২৫-৩০ টাকা, ফুলকপি ৩০-৩৫ টাকা, শিম ৪০-৫৫ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, আলু ৫০ টাকা ও লাউ প্রতি পিস ৭০-৮০ টাকা। এছাড়াও শালগম প্রতিকেজি ৩৫-৪০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বন্দরবাজারে সবজি কিনতে আসা সাইদুর রহমান বলেন, এ বছর আলুর দাম আর কমবে না। ভরা মৌসুমেও আলুর কেজি ৫০-৬০ টাকা। সামনে রোজার মাস। প্রতিটি সবজির দাম বেড়ে যাবে। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও বাজারে তার চিত্র ঠিক উল্টো।
রবিউল নামে আরেক ক্রেতা বলেন, কোনো সবজিই ৪০-৫০ টাকার কম নেই। ৩০ টাকা কেজি ধরে প্রতি পিস বাঁধাকপির দামই পড়ে ৭০-৮০ টাকা। বাজারে এসে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভরা মৌসুমেও সবজির বাজারে আগুন কমেনি। আর কমবে বলেও মনে হচ্ছে না।
এদিকে রোজার মাসকে সামনে রেখে পাইকারি বাজারে গেল কয়েক সপ্তাহ থেকে ছোলাসহ নিত্যপণ্যে দাম বাড়লেও সপ্তাহে কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। তবে পাইকারি বাজারে না বাড়লেও খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে ছোলা, মটর ডাল, চালসহ নিত্যপণ্যের।
এ সপ্তাতে পাইকারি বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮৮ টাকা থেকে ৯৫ টাকায়। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১১৫ টাকায়। এছাড়া মটরশুঁটি পাইকারি বাজারে ৬৭ টাকা ধরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে ৭৫-৮০ টাকায়। মুগডাল প্রতিকেজি পাইকারি বাজারে মানভেদে ৪৫ টাকা থেকে ৫৪ টাকা খুচরা বাজারে তা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, মসুর ডাল পাইকারি বাজারে ১০১ টাকা থেকে ১০৩ টাকা খুচরা বাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা। তাছাড়াও চাল, তেল, পেয়াজ, রসুনের দাম পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি ধরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় পাইকারি বাজার অনেকটা স্থিতিশীল থাকলেও থেমে ছিল না খুচরা বাজার। চাল, ডাল, আটা, ময়দাসহ অধিকাংশে পণ্যের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা করে।
সিলেটের কালিঘাট এলাকার পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আমীন ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মাসুদ আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় পাইকারি বাজারে দাম খুব বাড়েনি। অনেকটা স্থিতিশীল ছিল। তবে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। খুচরা ব্যবসায়ী খুব বেশি পণ্য কিনছেন না।
আহমেদ জামিল/আরএইচ/জেআইএম