মিরসরাই

সরকারি বনাঞ্চল উজাড় করে চলছে দীঘি খনন

এম মাঈন উদ্দিন
এম মাঈন উদ্দিন এম মাঈন উদ্দিন , উপজেলা প্রতিনিধি, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বনাঞ্চল ধ্বংস করে দীঘি খনন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। দিনে বন্ধ থাকলেও রাতে একরের পর একর জায়গার গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও থামছে না বন উজাড়। এতে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) কর্তৃপক্ষ বনগুলো অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণ করা বনাঞ্চলে রাতের আঁধারে ৮ থেকে ১০টি স্কেভেটর দিয়ে দীঘি খনন করছে একটি সিন্ডিকেট। এসব দীঘি খননের ফলে উপকূলীয় বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ফলে সংরক্ষিত বন পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কার পাশাপাশি এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর এলাকার ইছাখালী ইউনিয়নে অবস্থিত জিরো পয়েন্ট থেকে উত্তর-পশ্চিমে বনে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। দু’চোখ যতটুকু যাচ্ছে উজাড় করা খালি জায়গা দেখা যাচ্ছে। এভাবে শত শত একর বনাঞ্চল ধ্বংস করে একাধিক দীঘি খনন করা হয়েছে। ইছাখালী ইউনিয়নের টেকেরহাট থেকে শুরু করে বঙ্গোপসাগরের তীরের উপকূলীয় অঞ্চল পর্যন্ত দীঘি খনন করা হয়েছে। অনেকগুলো স্কেভেটর রাখা হয়েছে সেখানে। যেগুলো দিয়ে রাতে দীঘি খনন করা হবে। বেশ কয়েক একর জায়গার গাছ কেটে রাখা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে ওইসব জায়গায় দীঘি খনন করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রথমে রাতের আঁধারে বনের গাছপালা কাটা হয়। এর কিছুদিন পর সেই খালি জায়গায় দীঘি খনন চলে। তারপর সময়-সুযোগ বুঝে দখল নিশ্চিত করা হয়। দীঘি খনন শেষ হলে বিভিন্ন মানুষের কাছে একর হিসেবে বিক্রি করে থাকে। প্রতি একর দীঘি বিক্রি হচ্ছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায়। এভাবে বিগত এক বছর ধরে দীঘি খনন করে বিক্রি চলছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বেজার লোকজনকে ম্যানেজ করে একাজ করা হচ্ছে। ক্ষমতাশীন দলের কিছু নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট এতে জড়িত রয়েছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, মাঝে মধ্যে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও অজানা কারণে পুনরায় চলে এই বন ধ্বংসের কাজ। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের জন্য অধিগ্রহণ করা হলেও সেটি এখনো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। স্কেভেটর দিয়ে বনের গাছপালা উপড়ে ফেলে খালি করা হচ্ছে।

সরকারি বনাঞ্চল উজাড় করে চলছে দীঘি খনন

স্থানীয়রা জানান, এখানে ফসলি জমিসহ কেওড়া বাগান কেটে দীর্ঘসময় ধরে একশ্রেণির প্রভাবশালী চক্র রাতের আঁধারে এসব দীঘি খনন করে আসছে।

১৯৭৬ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘চরনিলক্ষী সোনালী সমবায় কৃষি খামার সমিতি লিমিটেড’ সদস্যদের মাঝে সরকার ৫৫৬ একর জায়গা বন্দোবস্ত দেয়। ওই জায়গার কয়েকশো একর বনভূমি চলে গেছে দীঘির আওতায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রার জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্দেশ্যে এই জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করে বলেও জানান স্থানীয়রা।

বন উজাড়ের বিষয়ে মিরসরাই উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা গফুর মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, যেসব জায়গায় দীঘি খনন করে মৎস্য প্রকল্প করা হচ্ছে, সেটি এখন বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের জন্য বেজা কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারাই ব্যবস্থা নিতে পারেন। ফেনীর সোনাগাজী অঞ্চল থেকে মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া পর্যন্ত প্রায় ২৬ হাজার একর জমি এরইমধ্যে খতিয়ানভুক্ত হয়ে গেছে।

সরকারি বনাঞ্চল উজাড় করে চলছে দীঘি খনন

সম্প্রতি উপজেলার ইছাখালীয় এলাকায় বেজার উপ-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়াছিনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের আওতাধীন বেজার অধিগ্রহণকৃত জায়গায় যেখানে বন কেটে দীঘি খনন করা হচ্ছে সেখানে অভিযান চালিয়ে দীঘির পাড় কেটে দেওয়া হয়েছে। জড়িত কয়েকজনকে কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতেও পাঠানো হয়েছে এবং জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ ফারুক বলেন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতকারী অবৈধভাবে মাছচাষ করে আসছিল। তা উদ্ধারে কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।