সিলেটে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি সবজির, তবুও চড়া দাম

আহমেদ জামিল
আহমেদ জামিল আহমেদ জামিল , জেলা প্রতিনিধি সিলেট
প্রকাশিত: ০৭:৪৯ পিএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শীতকালীন শাক-সবজির ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও সিলেটের বাজারে কমেনি দাম। গত বছরের পুরোটা সময়ই চড়া ছিল সবজির দাম। নতুন বছরের শুরুতেও সেই উত্তাপ কমেনি। ভরা মৌসুমেও সবজির দামে দিশেহারা স্বল্প আয়ের মানুষ। ফলে বাজারে গিয়ে অনেককেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।

যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার কৃষকের কাছ থেকেই বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। এছাড়া আলুর দাম না কমায় অন্য সবজির ওপর তার প্রভাব পড়ছে। যার কারণে সবজির দাম কমছে না।

তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। পাইকারি বাজার থেকে খুচরায় পৌঁছাতে হাতবদলের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দামও। এক হাত থেকে অন্য হাতে গেলে কেজিতে অন্তত ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বাড়ে। এক বাজার থেকে অন্য বাজার হয়ে ভোক্তা পর্যায়ে গেলে দাম বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় দ্বিগুণ।

সবজি বাজারে এমন অস্থিতিশীলতা বিরাজ করলেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্তারা। সবজির বাজারে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয় না, শুধু মনিটরিং করা হয় বলে জানিয়েছেন ভোক্তার উপপরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘সবজি বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয় না শুধু মনিটরিং করা হয়। ছোট ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয় না। তবে এখন থেকে লোক পাঠিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। প্রয়োজনে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

এদিকে, রমজান সামনে রেখে কিছু সবজির দাম ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। টমেটো গত সপ্তাহে পাইকারি বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে টমেটো, গাজরসহ কিছু সবজির দাম বেড়ে যাবে।

সিলেট

হাতবদলের সঙ্গে দাম বাড়ে

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকায়। এছাড়া কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৪৫, শিম ৩৫ থেকে ৪০, ফুলকপি ২০, বাঁধাকপি ১৫, করলা ৪০, বেগুন ৪০, টমেটো ৩৫, গাজর ২৫, পুঁইশাক ২০, শালগম ৩০, মুলা ১৫, মিষ্টি আলু ৪০ টাকায় বিক্রি হয়।

সোবহানীঘাট থেকে এক কিলোমিটার দূরে বন্দরবাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ছিল ৮০ টাকা। এছাড়া শিম ৬০, ফুলকপি ৪০, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৩৫, আলু ৪০ থেকে ৪৫, টমেটো ৫০ থেকে ৬০, গাজর ৪০, করলা ৮০, বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি হয়।

এছাড়া বন্দরবাজার থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে রিকাবীবাজারের চিত্র আরও ভয়াবহ। সেখানে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয় সবজি।

আজ বেলা ১১টার দিকে রিকাবীবাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১০০, করলা ১০০ ও প্রতি কেজি গাজর ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া এ বাজারে প্রতি কেজি শিমের দাম ৬০, ফুলকপি ৫০, বাঁধাকপি ৩৫ থেকে ৪০, আলু ৫০, টমেটো ৬০, বেগুন ৬০, মুলা ৬০ ও প্রতি পিস লাউ ৮০ টাকায় বিক্রি হয়।

এই বাজার ছাড়াও সিলেট নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও আবাসিক এলাকার ভেতরে ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতাদের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিকাবীবাজারের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, প্রতিটি সবজির থালা হিসেবে চাঁদা দিতে হয়। এতে আমাদের লাভ খুব কম হয়। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে সবজি বিক্রি করতে হয়।

সোবহানীঘাট কাঁচাবাজারের পাশে ভ্যানে সবজি বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মোসলেম উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০ কেজি সবজি কিনলে ৩-৪ কেজি পচা ও নষ্ট থাকে। এগুলো পুষিয়ে নিতে হয়। পাইকারি বাজারে দাম কমলে আমরাও কম দামে সবজি বিক্রি করি।

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা থেকে সোবহানীঘাট কাঁচাবাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা ছায়েদ মিয়া বলেন, এবার আলুর দাম না কমায় অন্য সবজির ওপর প্রভাব পড়ছে। আগে মানুষ সস্তায় আলু কিনতে পারছে। এবার আলুর দাম চড়া হওয়ায় অন্য সবজির ওপর চাপ পড়ছে। যে কারণে কোনো সবজির দাম কমছে না। আলু সস্তা হলে এগুলোর দামও কমবে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘রিকাবীবাজারে বেশি দামে সবজি বিক্রি হয় সেটা আমরাও জানি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে-তারা টুকেরবাজার থেকে সবজি এনে বিক্রি করে। লোকাল সবজি হওয়ায় দাম একটু বেশি।’

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ বেশি

চলতি বছর সিলেটে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। এছাড়া সিলেটে যেসব ফসল বছর দুয়েক আগেও নামেমাত্র উৎপাদন হতো, এ বছর সেসব ফসলেরও বাম্পার ফলন হয়েছে। তবুও বাজারে অস্বস্তি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিলেট জেলায় শাক-সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১ হাজার ৫২০ হেক্টর আর আবাদ হয়েছে ৫৪ হাজার ২৭৩ হেক্টরে। এবছর সিলেটে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ২৯৩ হেক্টর, গম ২৭৬ হেক্টর, ভুট্টা ৬৫২ হেক্টর ও মিষ্টি আলু ১৬৩ হেক্টর জমিতে।

এছাড়াও সিলেট মেট্রোপলিটনসহ ১৩ উপজেলায় এ অর্থবছরে সরিষার ফলন হয়েছে ৬ হাজার ৬১৩ হেক্টর, বাদাম ১২১ হেক্টর, মসুর ডাল ২১ হেক্টর, মাসকলাই ৬৪৯ হেক্টর, খেসারি ৭ হেক্টর, মটরডাল ৯ হেক্টর, মুগডাল ২১ হেক্টর, পেঁয়াজ ৪৩৪ হেক্টর, রসুন ১৬৩ হেক্টর, ধনিয়া ২২৬০ হেক্টর, মরিচ ২,০০৮ হেক্টর, তিল ৬৪ হেক্টর, তরমুজ ৪০২ হেক্টর, আখ ২১ হেক্টর, তিসি ১৫ হেক্টর, সূর্যমুখী ৩৭৫ হেক্টর ও ছোলা ৮ হেক্টর জমিতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, এবার সিলেটে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আবাদ হয়েছে। বিশেষ করে কিছু সবজি সিলেটে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি উৎপাদন হয়েছে। শীতকালীন শাক-সবজির সঙ্গে গম, ভুট্টা চাষেও কৃষকরা ঝুঁকছেন। আগামীতে এসব ফসল আরও গুরুত্ব দেওয়া হবে।

জেএএইচ/
আহমেদ জামিল/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।