বুধবার উরস স্পেশাল ট্রেনে ভারতের মেদেনীপুরে যাচ্ছেন ২২শ যাত্রী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ০৯:২৬ এএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

এ বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের জোড়া মসজিদে ১২৩তম বার্ষিক উরস শরীফ উপলক্ষে রাজবাড়ী থেকে দুই হাজার দু’শর বেশি যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাবে একটি উরস স্পেশাল ট্রেন। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টায় রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে ২৪টি বগি সম্বলিত ট্রেনটি ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করবে। উরস শেষে ট্রেনটি আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ফিরে আসবে।

বাংলাদেশ-ভারত সরকার যৌথভাবে ১৯০২ সাল থেকে এই উরস স্পেশাল ট্রেনটি চলাচলের ব্যবস্থা করে আসছে। তবে করোনার কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালে উরস স্পেশাল ট্রেন যায়নি। ভারতের মেদিনীপুরের সঙ্গে মিল রেখে একইদিন রাজবাড়ীর বড় মসজিদ খানকা শরীফে নানা আনুষ্ঠানিকতা হয়।

এদিকে উরস স্পেশাল ট্রেনটিকে কেন্দ্র করে ওইদিন রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। রেললাইনের পাশ দিয়ে মুখরোচক খাবারসহ হরেক রকমের দোকান সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। এ সময় কেউ আসেন ট্রেন দেখতে, কেউবা আসেন ঘুরতে। আবার কেউ আসেন ট্রেনে চুম্বন ও সালাম করতে। এছাড়া কাদেরীয়া তরিকার ভক্ত ও মুরিদানরা আসেন মানত করা টাকা, হাঁস, মুরগি, কবুতর, ছাগলসহ ইত্যাদি দিতে। এদিন সকাল থেকেই ট্রেনটি সাজানো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ করতে থাকেন ভক্ত ও মুরিদানরা।

jagonews24

ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, ট্রেন ছাড়া উপলক্ষে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আসে। কেউ আসে দেখতে, কেউ সালাম আবার অনেকে আসে ভক্তি-শ্রদ্ধা করতে। এই ট্রেনটিতে ২ হাজারে বেশি মানুষ গেলেও স্টেশনে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। ওই দিন বিকেল থেকে ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত স্টেশন এলাকা মানুষে পরিপূর্ণ থাকে।

স্থানীয় মেহেদী হাসান বলেন, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছেন প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজবাড়ী থেকে মেদেনীপুরে উরসের একটি স্পেশাল ট্রেন যায়। এই ট্রেন দেখতে আসেন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। এতে স্টেশন এলাকা মিলন মেলায় পরিণত হয়। এটা সবার জন্য একটা আনন্দের দিন। যারা মেদেনীপুর হুজুরের অনুসারী, তারা মানত করে থাকেন এবং সেই কারণে কেউ মুরগি, কেউ কবুতরসহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে আসেন। আবার অনেকে নগদ টাকাও দেন। সারাদেশ থেকে যেহেতু এই একটি মাত্র ট্রেন মেদেনীপুরের উরসে যায়, সেহেতু এই ট্রেনের বগির সংখ্যা বাড়ালে আরও কিছু মানুষ যেতে পারতো।

মেদেনীপুরের মুরিদান রেজাউল হোসেন খান ও গোলাই মন্ডল বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী থেকে ভারতের মেদেনীপুরের উরসে একটি ট্রেন যায়। সেই ট্রেনে অনেকে বিভিন্ন কারণে যেতে পারে না। ফলে ভারতের মেদেনীপুরের সঙ্গে মিল রেখে রাজবাড়ী বড় মসজিদ খানকা শরীফেও উরস করা হয়। উরস উপলক্ষে গেট নির্মাণ, মসজিদ রংসহ নানা কাজ হচ্ছে। এখানেও হাজার হাজার মানুষ হয়।

রাজবাড়ী আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়ার সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল আজিজ কাদেরী খোকন বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের জোড়া মসজিদে আল মেদিনীপুরী (আ.) মশহুর নাম ‘মওলাপাক’র ১২৩তম উরস শরীফ উপলক্ষে রাজবাড়ী আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়ার ২ হাজার ২শোর বেশি উরস যাত্রীর ভিসাসহ প্রায় সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। এখন তারা যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় আছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ট্রেনটি ছেড়ে যাবে এবং উরস শেষে ফিরে আসবে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে। মেদেনীপুরের সঙ্গে মিল রেখে রাজবাড়ীর বড় মসজিদ খানকা শরীফেও উরস অনুষ্ঠিত হবে।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, উরস শরীফে যাওয়ার জন্য হাজার হাজার ভক্ত ও মুরিদান আবেদন করেন। কিন্তু ব্যবস্থা না থাকায় সবাইকে নিতে পারেন না। যে কারণ লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত করে পাসপোর্ট নিয়ে ভিসা সম্পন্ন করেন। তবে অনেকে সড়ক পথসহ অন্যান্যভাবে মেদেনীপুরের উরস শরীফে যান।

রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমনাথ বসু বলেন, উরস স্পেশাল ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে স্টেশন এলাকায় উরস যাত্রীসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। যাত্রী ও জনগণের জানমাল রক্ষায় তারা সর্বচ্চো নিরাপত্তা দেবেন। এছাড়া স্টেশন এলাকা সিসি টিভির আওতায় থাববে।

রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বলেন, ১৯০২ সাল থেকে আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়ার উদ্দ্যোগে রাজবাড়ী থেকে ভারতের মেদেনীপুরে একটি উরস স্পেশাল ট্রেন যায়। এবারও আগামী বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টায় ২৪টি বগি সম্বলিত উরস স্পেশাল ট্রেন রাজবাড়ী থেকে ভারতের মেদেনীপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। ট্রেনটিতে ২ হাজারের বেশি উরস যাত্রী থাকবে এবং ট্রেনটি ভারতীয় কোচ দ্বারা চলবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক সুন্দরভাবে ট্রেনটি মেদেনীপুরে যাবে এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ফিরে আসবে।

রুবেলুর রহমান/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।