বরিশালের ৯ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭৯ চিকিৎসক পদ শূন্য

শাওন খান
শাওন খান শাওন খান , জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল বরিশাল
প্রকাশিত: ১১:৫৭ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায় ৯টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রায় সবকটিতেই চিকিৎসক সংকট। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব উপজেলার লাখ লাখ রোগী। এসব এলাকার রোগীরা জটিল রোগে আক্রান্ত হলেও পাচ্ছেন না যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা।

রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সাধারণ চিকিৎসা ছাড়া জটিল কোনো রোগের চিকিৎসা এসব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেওয়া হয় না। এরপরও অধিকাংশ সময় চিকিৎসক পাওয়া যায় না। দায়িত্বে অবহেলাও করেন চিকিৎসকরা। বহির্বিভাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রোগীদের।

কয়েকটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগী দেখার কার্যক্রম শুরুর কথা সকাল সাড়ে ৮টায়। কিন্তু সকাল ৯টা পর্যন্ত অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের কক্ষগুলো ফাঁকা থাকে। বেশিরভাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। যারা রয়েছেন তাদের অধিকাংশই মেডিকেল অফিসার কিংবা অ্যাসিস্টেন্ট। ফলে জটিল কোনো রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারেন না তারা। ফলে রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলা সদর ও বিভাগীয় হাসপাতালে। এছাড়া অধিকাংশ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করাতে হয় বাইরে থেকে। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হন রোগীরা।

বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে সদর ছাড়া সবগুলোতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২১৫টি। এর মধ্যে ১৩৬টি পদে চিকিৎসক থাকলেও শূন্য রয়েছে ৭৯টি।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৫ জন। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ১ জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১ জন, মেডিকেল অফিসার ২ জন, মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক) ১ জন। এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ও দন্ত চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছে ১৯ জন। শূন্য রয়েছে ৫টি পদ। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ও দন্ত চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। মেডিকেল অফিসার ১ জন ও দুই জন সহকারী সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে।

উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন ১৫ জন। শূন্য রয়েছে ১০টি পদ। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ও দন্ত চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ৩ জন মেডিকেল অফিসার ও ৪ জন সহকারী সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে।

বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন ২০ জন। শূন্য রয়েছে ১১টি পদ। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিও), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) ও সহকারী দন্ত চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ২ জন সহকারী সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে।

আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৬ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ১৩ জন। শূন্য রয়েছে ১৩টি পদ। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থ-সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিও), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) ও দন্ত চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক/হোমিওপ্যাথি) ও একজন সহকারী সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে।

বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৮ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন ১৪ জন। শূন্য রয়েছে ৪টি পদ। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ও দন্ত চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া একজন সহকারী সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে।

মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ১৬ জন। শূন্য রয়েছে ১২টি পদ। এর মধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থ-সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ফিজিক্যাল মেডি অ্যান্ড রিহ্যা.), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিও) ও ৪ জন মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৮ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন ১২ জন। শূন্য রয়েছে ৬টি পদ। এর মধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), মেডিকেল অফিসার ও একজন সহকারী সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে।

গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ১৫ জন। শূন্য রয়েছে ১৩টি পদ। এর মধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়েট্রিক), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থপেডিক), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিও), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) ও ৪ জন মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে।

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. বখতিয়ার আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক কিছু কম। যারা রয়েছেন তিন ধাপে ভাগ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে চিকিৎসকের চেয়ে ভবনের অবস্থা ভয়াবহ। এছাড়া বহির্বিভাগের প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিনশ রোগী দেখেন চিকিৎসকরা।

তবে চিকিৎসক সংকট থাকলেও চিকিৎসা সেবা প্রদানে কোনো সমস্যা হয় না বলে জানান গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, আসলেই চিকিৎসক সংকট রয়েছে, কিন্তু চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে না। সংকটের মধ্যেও রোগীদের যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।

সার্বিক সংকটের কথা জানিয়ে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান জাগো নিউজকে বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। কোনো কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে আমাদের। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত জানাচ্ছি। আশা করছি, নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলে এই সংকট কিছুটা কেটে যাবে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।