মিয়ানমারে সংঘাত

এপারে থামানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্য, জ্বালানি ও ভোজ্যতেল পাচার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ১১:৪৬ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ছবি: মিয়ানমারে নিত্যপণ্য পাচারের সময় আটক

সমুদ্রপথে মিয়ানমারে প্রতিনিয়ত পাচার হচ্ছে জ্বালানি ও ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী। গ্রেফতার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের পরও পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে পাচার রোধ করা যাচ্ছে না। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী গোষ্ঠি ও জান্তা বাহিনীর চলমান সংঘাতে আরাকান রাজ্যে এসব নিত্যপণ্য, জ্বালানি ও ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পাচার বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সর্বশেষ পাচারকালে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভোরে টেকনাফ এবং রামুতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ১৭০০ লিটার অকটেন উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১৫। এসময় পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে রোহিঙ্গাসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়।

আটকরা হলেন, রামুর খুনিয়াপালং ৯নং ওয়ার্ড পেঁচার দ্বীপ এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সোবহানের ছেলে নুরুল হক (৩০) এবং একই এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে রহমত আলী (৩৫), টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়নের মোছনী নয়াপাড়া এলাকার মমতাজ মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দিন (৩২), ক্যাম্প-২৭ এর সি/১২ ব্লাকের বাসিন্দা মৃত নুর আহমদের ছেলে শফিউল্লাহ (৩৭) এবং নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক বি এর বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুছের ছেলে নূর হোসেন (২৪)।

এর আগেও টেকনাফ এবং রামুতে পৃথক চারটি অভিযানে পাঁচ হাজার ৩৮৫ লিটার জ্বালানি তেল উদ্ধার করে র‌্যাব। পাচারের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১২ জনকে। আর লাইসেন্সবিহীন পেট্রোলিয়াম ব্যবসা পরিচালনার দায়ে ছয় প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসন। এনিয়ে দেশীয় পণ্য পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ হাজার ৮৫ লিটার তেল উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এসব ঘটনায় আটক করা হয়েছে ১৭ জনকে।

এপারে থামানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্য, জ্বালানি ও ভোজ্যতেল পাচার

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক সংঘর্ষের পর সেদেশের অভ্যন্তরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, জ্বালানি ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বাংলাদেশের সঙ্গে দামের বড় পার্থক্যের কারণে অতি মুনাফার আশায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাচারকারী চক্র। সুযোগ বুঝে এ চক্রটি বৈদেশিক মুদ্রায় কেনা জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্য সাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অবাধে পাচার করছে মিয়ানমারে।

র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে অবৈধভাবে চোরাইপথে নিত্যপণ্য ও জ্বালানি ভোজ্যতেল পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করছে একটি চক্র। ফলে একদিকে যেমন সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি দেশীয় খাদ্যদ্রব্য, অকটেন, ডিজেল পাচার হওয়ার কারণে দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে পাচারকারীদের একটি তালিকা তৈরি করে তাদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে র‌্যাব। দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, বুধবার ১৭০০ লিটার অকটেনসহ এ পর্যন্ত সাতটিরও বেশি অভিযানে ৭ হাজার ৮৫ লিটার তেল উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৭ জনকে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সবাই পরস্পরের সহযোগিতায় বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প থেকে পাইকারি দামে জ্বালানি এবং খুচরা মুদির দোকান থেকে ভোজ্য তেল ও নিত্যপণ্য সংগ্রহ করে সাগরপথে মিয়ানমারে পাচার করছে।

গ্রেফতার ও পলাতক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।