দুই শিশুর মৃত্যু

ভাইরাস শনাক্তে তৎপর স্বাস্থ্য বিভাগ, আইসোলেশনেই বাবা-মা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৭:২৭ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

রাজশাহীতে বরই খাওয়ার পর অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দুই বোনের মৃত্যুর ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। মারা যাওয়া দুই শিশুর নমুনা পরীক্ষার পর নিপাহ ভাইরাসের অস্তিত্বও পাওয়া যায়নি। এমনকি শিশু দুটির মৃত্যুর পর তাদের বাবা-মাকেও হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। নতুন কোনো ভাইরাসে শিশু দুটির মৃত্যু হয়েছে কি না তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা।

মাত্র দুদিনের ব্যবধানে এ দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ এখনো খুঁজে পাননি তারা। এমন পরিস্থিতিতে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম রাজশাহীতে এসে কাজ করছে।

তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর। তিনি বলেন, ‘এখনই বলা যাচ্ছে না বরই খেয়ে নাকি অন্য কোনো কারণে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে, নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় কাঁচা রস ও বাদুড়ের খাওয়া বা আঁচড়ানো যেকোনো ফল না খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আইইডিসিআর থেকে আসা বিশেষজ্ঞ দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০ নম্বর নিপাহ আইসোলেশান ওয়ার্ডে ভর্তি শিশুদের বাবা মঞ্জুর রহমান ও মা পলি খাতুনের সঙ্গে কথা বলে। তারা মারা যাওয়া শিশু দুটি ও তাদের বাবা-মায়ের রোগের কেস হিস্ট্রি শোনেন। এছাড়া মৃত দুই শিশুর পাকস্থলী থেকে সংগ্রহ করে রাখা নমুনা নিয়েছেন। এসময় রামেক হাসপাতালের পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরাও আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গে কথা বলেন।

আরও পড়ুন: মা-বাবাকে রিলিজ দিচ্ছে হাসপাতাল, রামেকে আইইডিসিআর টিম

পরে তদন্ত দল রামেক হাসপাতাল থেকে জেলার চারঘাটে অবস্থিত রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে যায়। সেখানে শিশু দুটি ও তার বাবা-মা যে কোয়ার্টারে থাকতেন সেখানকার কিছু তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে তদন্ত দল শিশু দুটির পরিচর্যার জন্য যে গৃহপরিচারিকা ছিলেন তার সঙ্গে এবং রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। তবে এনিয়ে আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞ টিম গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য জানায়নি। গবেষণা শেষে এ বিষয়ে ফলাফল জানানো হবে বলে তারা জানান।

তদন্ত দলের সদস্য আইইডিসিআরের মেডিকেল অফিসার ডা. প্রিন্স বলেন, সব নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহ শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিস্তারিত বলা যাবে।

এদিকে রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের আইসোলেশনে থাকা শিশু দুটির বাবা-মাকে রিলিজ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেলা ১১টার দিকে তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) ইনচার্জ ডা. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘রোববার শিশু দুটির মায়ের শরীরে হালকা জ্বর ছিল। সোমবার তারা বেশ সুস্থ থাকায় তাদের হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। তবে বাড়িতেও তাদের আপাতত আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে। কেননা আমরা বলছি বাচ্চা দুটি অজানা এক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। কিন্তু অজানা সেই ভাইরাসটি আসলে কী সেটি কিন্তু এখন পর্যন্ত আইডেন্টিফাই করা সম্ভব হয়নি। ভাইরাস শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের পরিবারের লোকজন থেকে আলাদা থাকতে বলা হয়েছে।’

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘মৃত দুই শিশু ও তার বাবা-মা আসলে কোনো অজানা রোগে আক্রান্ত কি না তার সঠিক কারণ বের করা প্রয়োজন। তাই আইইডিসিআরের তিন সদস্য অধিকতর তদন্তের জন্য রাজশাহীতে কাজ করছে। তারা সোমবার আমাদের এবং শিশু দুটির ’

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পাসের গাছতলা থেকে বরই কুড়িয়ে এনে শিশু মুনতাহা মারিশা (২) ও মুফতাউল মাশিয়াকে (৫) খেতে দিয়েছিলেন তাদের বাসার গৃহকর্মী। বরইগুলো ধোয়া ছিল না। বরই খাওয়ার পরদিন হঠাৎ মারিশার গায়ে জ্বর আসে এবং বমি করতে থাকে। পরে ওইদিনই হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিশুটি মারা যায়।

এর দুদিন পর মাশিয়ারও জ্বর ও বমি শুরু হয়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়ে রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরদিন (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাশিয়াও মারা যায়।

শিশু দুটির বাবা মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিতের প্রভাষক। বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) ও দুই মেয়েকে নিয়ে ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন তিনি।

সাখাওয়াত হোসেন/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।