শর্ত-নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকে আছে খাদ্যদ্রব্য আমদানি

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশিত: ০৫:৫৭ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

রমজানকে কেন্দ্র করে শুল্ক কমানোর ঘোষণার পরও নানা জটিলতায় আটকে আছে ভারত থেকে খাদ্যদ্রব্য আমদানি। দীর্ঘদিন ধরে ভারত অংশে খাদ্যদ্রব্যের ওপর নানা শর্ত ও নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারছেন না আমদানিকারকরা।

ভারতের কঠিন শর্তে চলতি অর্থ বছরের ৬ মাস ও তার আগের অর্থ বছরের একই সময়ের ৬ মাসের তুলনায় আমদানি কমেছে এক লাখ ৬১ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন। তবে বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা আশ্বাস দিয়েছেন প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমদানি সহজ হলে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা কমে আসবে।

বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈশ্বিক মন্দা ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে প্রতিদিন লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। আর এ অবস্থায় আগামী মাসে শুরু হচ্ছে মাহে রমজান। তবে এ সময় নিম্নআয়ের মানুষ যাতে কম মূল্যে প্রয়োজনীয় কিনতে পারেন এ জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

চাল, পেঁয়াজ, চিনির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। খেজুর, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি, চাল ও ভোজ্যতেলের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে খেজুরের আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ শতাংশ; যা আগে ছিল ২৫ শতাংশ। অপরিশোধিত প্রতি টন চিনির ওপরে এতদিন আমদানি শুল্ক ছিল তিন হাজার টাকা। সেটি কমিয়ে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া চালের ওপর আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ; যা এতদিন ছিল ২৫ শতাংশ। আর পাম অয়েলের আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ছিল ১৫ শতাংশ, সেটি কমিয়ে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের জন্য প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল, দুই লাখ মেট্রিক টন চিনি এবং এক লাখ মেট্রিক টন ছোলার চাহিদা রয়েছে। এদিকে সরকারি নির্দেশনা এখনও পর্যন্ত বাণিজ্যিক সব ব্যাংকগুলোতে না আসায় অনেক আমদানিকারকরা সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন।

খাদ্যদ্রব্য আমদানিকারক উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস জানান, আমরা চাহিদামতো খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে না পারায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। আমদানি স্বাভাবিক হলে এ সংকট কাটবে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দ্রব্যমূল্যের বাজার স্বাভাবিক করতে আমদানি বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা কাটাতে সরকারকে দ্রুত ভূমিকা নিতে হবে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, ভারতের সঙ্গে বছরে ১৪ লাখ বিলিয়ন ডলারের আমদানি ও দুই লাখ বিলিয়ন ডলারের রফতানি বাণিজ্য হয়। ভারত পাশে থাকলে দেশে খাদ্যদ্রব্যের যে কোনো সংকট কাটানো সহজ হবে।

বেনাপোল আমদানি রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, ২০২২ সালের ২০ জুলাই দেশের বাইরে সিদ্ধ ও আতপ চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। একই বছরের ১৩ মে থেকে দেশটি গমের এলসি নিচ্ছে না। গত বছরের ১৯ আগস্ট পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং রপ্তানি মূল্য ১৫০-৮৫০ ডলারে বৃদ্ধি করায় সেই থেকে পেঁয়াজের স্বাভাবিক আমদানি বন্ধ রয়েছে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারি মিলস অ্যাসোসিয়েশনের একটি অভিযোগ দায়েরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে চিনি আমদানি বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীরা আমদানির সুযোগ পেলে এসব পণ্যের দাম কমবে বাজারে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বাণিজ্যিক সব ব্যাংকগুলোতে নিত্যপণ্য আমদানিতে সরকারের নির্দেশনা না পৌঁছানোয় ব্যবসায়ীরা সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন।

বেনাপোল বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, অনেক দিন ধরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে চাল, চিনি, রসুন, আলু ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে।

মো. জামাল হোসেন/আরএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।