পুরোনো বইয়েই চলছে বগুড়ার একুশে বইমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৪:১৯ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

কাগজের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় বগুড়ায় পুরোনো বইয়ের ওপর নির্ভর করে সাজানো হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। মেলায় কিছু স্টলে নতুন বই থাকলেও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতা পাচ্ছেন না দোকানিরা। মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখা যায়নি নতুন বইয়ের চমক।

সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) শহীদ খোকন পার্কে বগুড়ায় অমর একুশে বইমেলা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা কম হলেও ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভাটা পড়েনি। বাঙালির ভাষা ও ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে বিভিন্ন বয়সের মানুষ বইমেলা প্রাঙ্গণে ছুটে আসছেন। মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষেরা । অনেকে সপরিবারে এসেছেন প্রাণের মেলায়। এ বছর মেলায় ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। অন্যান্য বছর মেলার মধ্যে নতুন লেখকদের সমাগম ও আড্ডা থাকলেও এবছর নতুন বইয়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সেই দৃশ্য চোখে পড়েনি।

প্রতিবছরের মতো এবারও মেলায় স্টল নিয়েছে ‘আমাদের বুক্স’ প্রকাশনী। সেখানে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আবেদীন সনির সঙ্গে।

পুরোনো বইয়েই চলছে বগুড়ার একুশে বইমেলা

তিনি বলেন, কাগজের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। পুরাতন বইগুলোর নতুন মুদ্রণ ও লেখকরা নতুন বই প্রকাশ করতে পারেনি। স্টকের পুরোনো বই ছিল সেগুলো দিয়ে মেলার স্টল সাজানো হয়েছে।

তিনি বলেন, নতুন লেখক ইলমা বেহরোজের ‘প দ্ম জা’ ব্যাপক সাড়া তৈরি করেছে। এছাড়াও জাফর ইকবাল, আহমদ ছফা সহ বাকি লেখকদের বইয়ের দাম নতুন মুদ্রণে আগের চাইতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও বৃষ্টি ও শব-ই-বরাতের ছুটি থাকায় আশানুরূপ বিক্রি এখনও শুরু হয়নি। এরপরও শেষ মূহুর্তে বিক্রি বেড়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পাশেই গ্রন্থ দ্বীপ প্রকাশনীর স্টল। সেখানে কথা হয় এই প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক সুমন আহম্মেদের সাথে। তিনি বলেন, স্টলে ৫০০ মতো বই তুলেছি। দু-চারটি নতুন বাদে সব আগের ছাপানো বই তোলা হয়েছে। এর মধ্যে গোয়েন্দা রহস্য, ইসলামী শিক্ষা ও সাহিত্য, বাচ্চাদের গল্প-উপন্যাস, বিদেশি গল্প-উপন্যাসের অনুবাদ ও ভৌতিক গল্পের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আবার অনেকগুলো বই নতুন মুদ্রণ হওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বইয়ের দাম বেশি হওয়ায় কেনার আগ্রহও কম। অনেকেই মেলায় ঘোরাফেরা করছেন, কিন্তু সে তুলনায় বিক্রি কম হচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় নতুন বইয়ের সেই চমক আর পাবেন না পাঠকরা। একই সঙ্গে নতুন লেখকরাও বেশ সংকটে পড়বেন মূল্যবৃদ্ধিজনিত সমস্যার কারণে।

পুরোনো বইয়েই চলছে বগুড়ার একুশে বইমেলা

মেলায় আরেক স্টল আল-আমিন ব্রাদার্সের পরিচালক মনসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নতুন বই এবার কম হওয়ার একমাত্র কারণ কাগজের দাম বেশি। জাফর ইকবালের মতো লেখকের এবার মাত্র দুইটা বই বের হয়েছে, অন্যান্যবার তার চারটির মতো বই বের হয়। হুমায়ন আহমদের কোনো বই এবার নতুন মুদ্রণে বের হয়নি। তাদের বই মেলায় প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। তবে এবারে সেই আকর্ষণ নেই বললেই চলে।

মেলার আয়োজক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সূত্র জানায়, এরআগে অমর একুশে বইমেলায় প্রতিদিন নতুন লেখকদের ন্যূনতম ছয় থেকে সাতটি নতুন বই প্রকাশ হলেও এবার সেই সংখ্যা অনেক কমে গেছে। প্রতিদিন মাত্র ২-৩টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হলেও কোনো দিন সেটাও হচ্ছে না ।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার অর্থ সম্পাদক রবিউল আলম অশ্রু জাগো নিউজকে বলেন, এবারের মেলায় আগের তুলনায় নতুন বইয়ের সংখ্যা একেবারেই কম। প্রতিবার স্থানীয় লেখকরাই অসংখ্য নতুন বই প্রকাশ করে থাকেন। তবে কাগজের দাম বৃদ্ধির জন্য নতুন বই নেই বললেই চলে।

২০ ফেব্রুয়ারি শহীদ খোকন পার্কে শুরু হওয়া অমর একুশে বই মেলা আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। তবে একদিন সময় বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার মেলা শেষ হচ্ছে আগামী পহেলা মার্চ।

এনআইবি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।