শিকলে বন্দি মিলনের জীবন, নিরুপায় পরিবার
![শিকলে বন্দি মিলনের জীবন, নিরুপায় পরিবার](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/thakurgaon-milon-2-20240228170840.jpg)
ছয় বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন যাপন করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের মিলন হক। পায়ে শিকল আর ছোট ছাউনির ভেতরেই দিনযাপন করতে হয় তাকে। কথা ছিল পড়াশোনা শেষে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন মিলন। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডিও পেরুতে পারেননি তিনি।
জীবনের ৩০টি বসন্ত পার হলেও স্বাভাবিক হতে পারেননি মিলন। অপরিচিত জনের সঙ্গে আচরণ স্বাভাবিক হলেও নিজের পরিবারের লোকদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করেন তিনি। অনেক সময় নানানভাবে বিড়ম্বনায় ফেলে দেন স্থানীয়দের। পরিবারে উপার্জনক্ষম মানুষের অভাবে হচ্ছে না উন্নত চিকিৎসাও।
মিলন হক ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের পূর্ব কুজিশহরে মফিজ উদ্দীন ও শাহেদা বেগম দম্পত্তির ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৯ বছর বয়সে গলায় টিউমার ধরা পড়ে মিলনের। চিকিৎসা নেওয়ার পরে কিছুদিন সুস্থ হলেও আবার শুরু হয় অসুস্থতা। ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে এ অসুস্থতা। এখন শিকলে বেঁধে না রাখলে নানান ভাবে মানুষকে বিড়ম্বনায় ফেলে দেন তিনি। একদিকে স্বামীর অসুস্থতা অন্যদিকে ছেলের শিকলবন্দি জীবন যাপন নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করেন বৃদ্ধা শাহেদা বেগম। নিজের অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যান তিনি।
স্বামী ব্রেন স্টোক করে প্যারালাইসড, ছেলে শেকলে বাঁধা। স্বামী সন্তানের মুখের খাবার জোগাড় করবেন নাকি চিকিৎসা করাবেন এই দোটানায় চলছে শাহেদা বেগমের জীবন। মানুষের বাসায় কাজ করে সবার দু-মুঠো খাবারের ব্যবস্থাই করতে পারছেন তিনি। চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা নেই। স্বামী সন্তানের এমন খারাপ অবস্থা দেখতে হচ্ছে তাকে। এখন সন্তানের চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছে ঘুরছেন অসহায় এ নারী।
এ বিষয়ে প্রতিবেশী আজহারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, তাদের পরিবারটা চলতে পারছে না। তার বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করে পড়ে আছে। ছেলেটাও শিকলে বন্দি। আমরা মাঝেমধ্যে টুকটাক সহযোগিতা করি। কিন্তু মিলনের প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসার। তা না হলে পরিবারটার জন্য সামনে আরও কঠিন দিন অপেক্ষা করছে।
মিলনের মা শাহেদা বেগম বলেন, ভিটেমাটি ছাড়া কিছু নেই আমাদের। মিলনের বাপ অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। সুস্থ থাকলে উনি কাজে যেত। আমি একদিন গেলে আবার অসুস্থ হয়ে যাই। এখন মিলনের চিকিৎসা না হলে আমাদের পরিবারটা কীভাবে চলবে। যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। এখন পাশে কেউ না দাঁড়ালে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন (ইউএনও) বলেন, বিষয়টি অবগত হলাম। এমন পরিস্থিতি আসলে অত্যন্ত দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
তানভীর হাসান তানু/এনআইবি/এমএস