লিমনকে হত্যাচেষ্টা

৬ র‌্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা সিআইডিকে পুনঃতদন্তের আদেশ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ০৬:২৯ পিএম, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
বাবা-মায়ের সঙ্গে লিমন হোসেন

ঝালকাঠিতে কলেজছাত্র লিমন হত্যাচেষ্টা মামলা পুনঃতদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) আদেশ দিয়েছেন আদালত।

ছয় র‌্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম নারাজি দিলে আদালত এ আদেশ দেন।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এ এইচ এম ইমরানুর রহমান নারাজি আবেদন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। লিমনের মায়ের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র নিয়োজিত আইনজীবী আক্কাস সিকদার।

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে বরিশাল র‌্যাব-৮ এর সদস্যরা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময় তৎকালীন কলেজছাত্র লিমন হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে লিমনের বাম পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলতে হয়। এ ঘটনায় লিমনের মা বাদী হয়ে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল তৎকালীন বরিশাল র‌্যাব-৮ এর ডিএডি লুৎফর রহমান, করপোরাল মাজহারুল ইসলাম, কনস্টেবল আব্দুল আজিজ, নায়েক মুক্তাদির হোসেন, সৈনিক প্রহল্লাদ চন্দ ও সৈনিক কার্তিক কুমার বিশ্বাসসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ছয় র‌্যাব সদস্যের নামে ঝালকাঠির আদালতে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।

মামলাটি রাজাপুর থানার এসআই আব্দুল হালিম তালুকদার তদন্ত করে ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। ওই প্রতিবেদনে র‌্যাব সদস্যদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম ওই প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দেন। আদালত তার নারাজি আবেদন খারিজ করে দেন। পর এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন হেনোয়ারা বেগম। ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস কে এম তোফায়েল হাসান রিভিশন মঞ্জুর করেন।

রিভিশন মঞ্জুর হওয়ার পর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেলিম রেজা মামলাটি তদন্তের জন্য ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল পিবিআইকে নির্দেশ দেন। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে পিবিআই প্রধান কার‌্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে আবারও থানা পুলিশের মতো চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনে পিবিআই উল্লেখ করে, লিমন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা সত্য, তবে কারা তাকে গুলি করেছে তার কোনো সাক্ষী-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে সাক্ষী-প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হবে। এ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধেও লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর নারাজি দেন। লিমনের মায়ের দাবি, তার ছেলে কোনো সন্ত্রাসী ছিলেন না। একটি ভালো ছেলেকে র‌্যাব গুলি করে তাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। এ ঘটনার জন্য তিনি সুষ্ঠু ও সঠিক বিচার দাবি করেন।

র‌্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক পা হারানো লিমন হোসেন ২০১৩ সালে এইচএসসি, ২০১৮ সালে আইন বিষয়ে স্নাতক এবং ২০১৯ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন। পরে ২০২০ সালে তিনি সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে সহকারী প্রভাষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০২২ সালে যশোরের অভয়নগর থানার এক কলেজছাত্রীকে বিয়ে করেন লিমন।

লিমন হোসেন বলেন, র‌্যাব অন্যায়ভাবে আমাকে গুলি করে পঙ্গু করেছে। আমি অনেক কষ্ট করে মানুষের ভালোবাসায় পড়ালেখা শেষ করেছি ঠিকই, কিন্তু আমার পা হারানোর কষ্ট ভুলতে পারছি না। যতদিন বেচেঁ আছি ততদিন যারা আমাকে পঙ্গু করেছে তাদের বিচার দাবি করবো।

আতিকুর রহমান/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।