চেয়ারম্যানের নালিশ নিয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে সেই বৃদ্ধ দম্পতি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ১১:৩৩ এএম, ০১ মার্চ ২০২৪

ঠাকুরগাঁওয়ে বৃদ্ধ দম্পতিকে ভাড়া বাসা থেকে বের করে দিয়ে দরজায় তালা দেওয়া চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে গিয়ে নালিশ জানিয়েছেন সেই আব্দুল হালিম ও জোৎসনা বেগম দম্পতি।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটন সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে দীর্ঘ সময় ধরে কার্যালয়ে বসে ওই বৃদ্ধ দম্পতির কথা শুনে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী ওই দম্পতি।

বৃদ্ধ দম্পতির ভাষ্যমতে, সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পৌর শহরের দক্ষিণ সালন্দর শান্তিনগর এলাকায় স্কুলশিক্ষক ফারহানা ইসলাম কলির বাসায় ভাড়া ওঠেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। কয়েকদিন পর সকালে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান তাদের ঘুম থেকে টেনে হেঁচড়ে বাড়ির বাইরে বের করে দেন এবং বাড়ির দরজায় তালা দেন। জানা যায় ওই জায়গা নিয়ে চেয়ারম্যানের লোকজন ও বাড়িওয়ালার মধ্যে বিরোধ রয়েছে।

পরে গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সেদিন ভুক্তভোগী বৃদ্ধ দম্পতি জীবিকার তাগিদে বাইরে থাকায় তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি পরিদর্শনকারীদের। পরে তাদের দেখা করতে বলা হলে ওই বৃদ্ধ দম্পতি ইউএনওর কার্যালয়ে যান এবং তাদের সমস্যার কথা ইউএনওর কাছে তুলে ধরেন।

বৃদ্ধ আব্দুল হালিম বলেন, আমি এর আগেও ইউএনও স্যারের সঙ্গে দেখা করতে কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্যার সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় দেখা করা সম্ভব হয়নি। আজ দেখা করেছি। তিনি অনেকক্ষণ আমাদের কথা শুনেছেন। আমাদের যা প্রশ্ন করেছেন সব উত্তর দিয়েছি এবং চেয়ারম্যান কেন আমাদের বের করে দিয়ে তালা দিলেন, হুমকি ধামকি দিলেন এসব নালিশ করেছি ও বিচার চেয়েছি। এছাড়াও আমার ঘরের যেসব জিনিস পত্র চেয়ারম্যানের লোকজন সরিয়েছে সেসব জিনিস উদ্ধারের জন্য স্যারের সহযোগিতা চেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বলা হচ্ছে আমার নিজস্ব বাসা ছেড়ে ভাড়া বাসায় কেন উঠেছি? আমি স্যারকে পরিষ্কার করেছি বিষয়টি। বলেছি আমি টাকার অভাবে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারছি না। আমার বাড়ির বিক্রির জন্য এক ব্যক্তির থেকে কিছু টাকা নিয়েছি। কিন্তু বাড়ি খালি না করা পর্যন্ত ওই ব্যক্তি জমি রেজিস্ট্রি নিচ্ছে না। তাই বাড়ি খালি করার জন্য আমি স্কুল শিক্ষিকাকে অনুরোধ করে বলি তাদেরতো অনেক জায়গা জমি, যেন আমাকে একটি থাকার ঘর তুলে দেন। আমি প্রতি মাসে ভাড়া দেব। তখন তিনি আমাকে তার জায়গায় দুটো ঘর তুলে দেন। এখন ওই জায়গা নিয়ে কারো সঙ্গে বিরোধ থাকলে এখানে আমাদেরতো দোষ নেই। আমাদের থাকতে না দিলে থাকতাম না।

তবে এ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটন। তিনি এর আগে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। আমি দুদিন সেখানে গিয়েছি। অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীরাও গিয়েছিল।’

এদিকে ঘটনার পর ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি লিখিত এজাহার দাখিল করেছেন বাড়িওয়ালা স্কুল শিক্ষিকা ফারহানা ইসলাম কলি।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ একাধিকবার এসেছে। কিন্তু এখনো আমাদের এজহার মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। নিশ্চয় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। সেখানে ইউএনও স্যার পরিদর্শন করেছেন। মামলা নেওয়ার মতো ঘটনা হলে আমরা মামলা নেবো। আমরা তদন্ত করছি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ওই বৃদ্ধ দম্পতি আমার কার্যালয়ে এসেছিলেন এবং আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, আমি যতদূর করা যায় করবো।

তানভীর হাসান তানু/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।