টিসিবির পণ্য প্যাকেটজাতে লাখ টাকা হাতানোর অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ১১:০০ এএম, ১০ মার্চ ২০২৪

টিসিবির পণ্য প্যাকেটজাতকরণে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার (৬ মার্চ) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সোলেমান আলী বরাবর অভিযোগ করেন ডিলাররা।

অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্টে একটি মামলাও চলমান রয়েছে।

ডিলারদের এমন অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬১ জন ডিলারের মাধ্যমে ৯২ হাজার ৬৮৮ জন স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে কম দামে টিসিবির নিত্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল ও তেল বিক্রি শুরু করছে। তবে টিসিবি পণ্য প্যাকেটজাত করণে এক টাকা ও শ্রমিক মুজরি হিসেবে এক টাকা করে ডিলারদের কাছ থেকে আদায় করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী শহিদুল ইসলাম ও মিন্টু। ফলে প্রতিবার ডিলারদের কাছ থেকে শুধু প্যাকেজিং বাবদ ৯২ হাজার ৬৮৮ টাকা করে গত সাত মাসে আদায় করেছেন তারা। যার পরিমাণ দাঁড়ায় ছয় লাখ ৪৮ হাজার ৮১৬ টাকা।

টিসিবির পণ্য প্যাকেটজাতে লাখ টাকা হাতানোর অভিযোগ

একইভাবে শ্রমিকদের খরচেও নেওয়া হয়েছে এক টাকা করে। সবমিলে ডিলারদের কাছ থেকে আদায় করা হয় প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা।

অথচ প্যাকেজিং ও আনলোডিং বাবদ ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩২ টাকা খরচ হয়েছে বলে টিসিবির ক্যাম্প অফিস দিনাজপুরে পত্র পাঠান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সোলেমান আলী। পরবর্তীতে ভ্যাট ও আয়কর কর্তন করে প্যাকেট প্রতি ২ টাকা ৬১ পয়সা হারে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯১৬ টাকার একটি চেক প্রদান করেন টিসিবি ক্যাম্প অফিসের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান।

তাহলে প্রশ্ন ওঠে ডিলারদের কাছ থেকে যে অর্থ আদায় করা হয়েছে সেগুলো গেলো কথায়?

অনুসন্ধানের সময় ডিলাররা অভিযোগ করে বলেন, অফিস সহকারী শহিদুল প্যাকেটজাত ও শ্রমিক খরচের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সাত মাসে শহিদুল ও মিন্টু প্রায় ১০ লাখ টাকা আদায় করেছেন ডিলারের কাছ থেকে। বিষয়টি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) অভিযোগ করেছি। তিনি টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

মেসার্স স্বর্গ সমুদ্র ট্রের্ডাসের সুব্রত সরকার, মেসার্স শিফা ট্রেডার্সের সাইফুল ইসলাম, মেসার্স বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের আনোয়ার হোসেন ও মেসার্স সাহেদী মুদি স্টোরের রোকনুজ্জামান সাহেদী জানান, শহিদুলের নির্দেশে মিন্টু শ্রমিক খরচ এক টাকা ও প্যাকেতজাতকরণে এক টাকা করে নিয়েছেন। টাকা দিতে না চাইলে তারা চাপ দিতেন। আটকে দেওয়া হতো গাড়ি। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে অভিযোগ করেন ডিলাররা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বলেন, টিসিবির পণ্য প্যাকেজিং বাবদ রংপুর থেকে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় সেটা অপ্রতুল থাকায় ডিলারদের কাছ থেকে অবশিষ্ট টাকা নেওয়া হয়। তবে এটা আমার হাতে দেওয়া হয়নি, অফিসে দেওয়া হয়েছে। টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো লিখিত আদেশ ছিল না। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে এটা করেছিলেন।

তিনি বলেন, লেবার খরচ ও প্যাকেজিংয়ের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। কিছু ডিলার নিজের স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। অতিরিক্ত টাকার বিষয়ে জেলা প্রশাসক অবগত।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সোলেমান আলী জানান, টিসিবি পণ্য প্যাকেটজাতে টাকা নেওয়ার কথা জানা ছিল না। অফিসের কর্মচারির বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন ডিলাররা। লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টিসিবির পণ্য প্যাকেটজাতে লাখ টাকা হাতানোর অভিযোগ

এর আগে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আয়ের অভিযোগ ওঠে, যা এরইমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। তিনি গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে জমি ক্রয় করেন। এরপর সেই জমি সরকারি প্রকল্পে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেন। এভাবে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। হঠাৎ করেই এত সম্পদের মালিক হওয়ায় শহরজুড়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা।

ডিসি অফিসের তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারী এখন ঠাকুরগাঁও শহরের বড় মাঠের পাশে নির্মাণ করছেন ছয়তলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ি। বাড়িটিতে রয়েছে লিফটের ব্যবস্থাও। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে একটি মামলা চলমান রয়েছে।

তানভীর হাসান তানু/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।