উল্লসিত ঠিকাদাররা

অবশেষে বদলি নোয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের সেই প্রকৌশলী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নোয়াখালী
প্রকাশিত: ১০:২৬ এএম, ২৩ মার্চ ২০২৪

নোয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিবকে বদলি করা হয়েছে। এরআগে তার বিরুদ্ধে ঘুস-দুর্নীতিসহ সরকারি কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামিম আখতারের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে নোয়াখালী থেকে সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিবকে ফেনী গণপূর্ত বিভাগে বদলি করা হয়। একই আদেশে ফেনী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল হাছানকে নোয়াখালীতে সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিবের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে নির্বাহী প্রকৌশলীদের বদলির আদেশের নোটিশ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে নোয়াখালী গণপূর্ত বিভাগ থেকে ঘুস-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিবের বদলির খবর শুনে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। তাদের দাবি, ওই প্রকৌশলীকে নির্দিষ্ট অংকের পার্সেন্টেজ না দিলে কারো বিল পাস হতো না। এছাড়া তিনি পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে লোকদেখানো কাজ করে এ জেলার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

অবশেষে বদলি নোয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের সেই প্রকৌশলী

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর জুনে মেয়াদ শেষ হওয়া নোয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের আরএপিপিসহ (মেরামত) বিভিন্ন প্রকল্পের সাত কোটি টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব কাজ করিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ করা হয়।

এনিয়ে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর জাগো নিউজে ‘নোয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের ৭ কোটি টাকার কাজে অনিয়ম’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এতে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের মেরামত ও সংরক্ষণ কাজের জন্য জেলার ৪৮টি স্থাপনার ৬৮টি কাজের জন্য পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার মেয়াদ ২০২৩ সালের জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ছিল। এর আগেই সব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক কাজের কিছুই করা হয়নি। আর করলেও নামমাত্র করে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে ডিসি অফিসের চারপাশ পরিষ্কারে খরচ দেখানো হয় ১৪ লাখ ১২ হাজার টাকা, সার্কিট হাউজের ফুল বাগানে খরচ ১৪ লাখ ২২ হাজার টাকা, অজুখানা নির্মাণ ও ভবন রঙকরণে খরচ ২৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা, পরিত্যক্ত বাসভবনের মেরামত ব্যয় ৩২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা দেখানো হয়।

এরআগে প্রকল্পের বিলে ২০ শতাংশ ঘুস না পেয়ে নিজ কার্যালয়ে হেনস্তার অভিযোগে নোয়াখালীর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন ওমর সাহেদ রিশাদ নামে এক ঠিকাদার।

অবশেষে বদলি নোয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের সেই প্রকৌশলী

মেসার্স ওমর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ওমর সাহেদ রিশাদ বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিবের নির্দেশে সুবর্ণচর ফায়ার সার্ভিস ভবন মেরামতের কাজ করি। গত বছর ১৬ এপ্রিল ১৭ লাখ ৫ হাজার ৪৫৬ টাকার বিল চাইতে গেলে আসামিরা ২০ শতাংশ ঘুস দাবি করেন। ঘুস দিতে অপারগতা জানালে নির্বাহী প্রকৌশলী তার দুই কর্মচারীসহ আমাকে মারধরসহ লাঞ্ছিত করেন। মামলা করায় ক্ষুব্ধ হয়ে সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিব আমার লাইসেন্স কালো তালিকাভুক্ত করে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, টাকা ছাড়া কোনো বিলে সই করতেন না সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিব। তাকে খুশি করতে না পারলে বছরের পর বছর আটকে থাকে ঠিকাদারদের পাওনা টাকা। স্টাফ কর্মকর্তা জাহিদ হাসান স্থানীয় হওয়ায় অনেকে বিল চেয়ে তাদের হাতে নাজেহাল হতে হয়েছে।

এছাড়া নোয়াখালীতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ৩২৪টি আবাসিক ফ্ল্যাটের নয়টি ভবন নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এখানে অনেক কাজ না করেই টাকা তুলে নেওয়া হয়। গত বছরের ৩০ জানুয়ারি (সোমবার) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ প্রকল্পে এক হাজার ২৫০ বর্গফুটের দুইটি ১০তলা ভবনে ৭২টি ফ্ল্যাট, এক হাজার বর্গফুটের দুইটি ১০তলা ভবনে ৭২টি ফ্ল্যাট, ৮০০ বর্গফুটের দুইটি ১০তলা ভবনে ৭২টি ফ্ল্যাট, ৬৫০ বর্গফুটের তিনটি ১০তলা ভবনে ১০৮টি ফ্ল্যাটসহ মোট ৩২৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়।

বদলির বিষয়ে জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিবকে বারবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে এরআগে তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা ঘুস-দুর্নীতি ও সরকারি কাজে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন। প্রত্যেকটি কাজ যথাযথ নিয়মে হয়েছে বলেও দাবি করেন।

ইকবাল হোসেন মজনু/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।