ঈদবাজার

বগুড়ায় ফুটপাতই ভরসা নিম্নবিত্তের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৫:৫৬ পিএম, ০৩ এপ্রিল ২০২৪

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বগুড়ার মার্কেটগুলোতে জমে উঠেছে কেনাকাটা। উচ্চবিত্তরা নগরীর নামিদামি শপিংমল থেকে কেনাকাটা করলেও নিম্নআয়ের মানুষের ভরসা শহরের হকার্স মার্কেট ও সড়কের পাশের ফুটপাতের বাজারগুলো।

ঈদের কেনাকাটায় নিম্নআয়ের মানুষরা ছিলেন বেতন-বোনাসের অপেক্ষায়। এ সময়ে এসে কেউ বেতন-বোনাস পেয়েছেন, কেউ রয়েছেন অপেক্ষায়। যারা পেয়ে গেছেন তারা শুরু করে দিয়েছেন ঈদের কেনাকাটা। যারা পাননি তাদের অনেকেই মার্কেট ঘুরে দর-দাম দেখছেন। এতে জমে উঠেছে স্বল্পআয়ের মানুষের ঈদের কেনাকাটা।

বগুড়া শহরের হকার্স মার্কেট নিম্নআয়ের মানুষদের অন্যতম ভরসাস্থল। এখানে শিশুদের পোশাকসহ বড়দের শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি-পাজামা, সালোয়ার-কামিজ, জুতা-মোজা, স্যান্ডেল, ব্যাগ, বেল্টসহ নানা ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। এখান থেকে পছন্দমতো কেনাকাটা করে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে।

বুধবার (৩ এপ্রিল) সরেজমিন হকার্স মার্কেটে দেখা যায়, দোকানগুলোতে পা ফেলানোর জায়গা নেই। বেচাবিক্রি জমে ওঠায় খুশি বিক্রেতারা। ক্রেতারাও সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করছেন।

হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী জিয়াউল হক বলেন, বেচাবিক্রি প্রথম থেকেই ভালো। তবে মাসের শুরু থেকে আরও জমে উঠেছে। শিশুদের পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। শিশুদের জন্য মাত্র ৩০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যে ভালোমানের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। নারীদের সালোয়ার কামিজের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০০-২০০০ টাকা। ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট ও পাঞ্জাবি সবই হাজার টাকার মধ্যে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা।

ঈদবাজার, বগুড়ায় ফুটপাতই ভরসা নিম্নবিত্তের

শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আবুল হাসান। তিনি বলেন, স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের জন্য মাত্র চার হাজার টাকার মধ্যে সব করমের কেনাকাটা শেষ করেছি। পরিবারের সদস্যরা ঈদে নতুন জামা পেয়ে খুশি।

তিনি বলেন, মার্কেটের সবকিছুর দাম আয়ত্তের মধ্যে আছে। এজন্য আমরা নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা এখানে আসি।

বগুড়া শহরের সাতমাথা, হোটেলপট্টি, শেরপুর ও স্টেশন রোডে ফুটপাতে ভ্যানে করে শিশুদের পোশাকসহ বড়দের শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি-পাজামাসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাতগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। কেউ গলা ফাটিয়ে ক্রেতাদের ডাকছেন, কেউবা ডাকছেন হ্যান্ডমাইকে রেকর্ডেড কণ্ঠে। কেউ পণ্য বিক্রি করছেন এক দামে, কেউবা আবার করছেন দামাদামি। এভাবেই চলছে তাদের বেচাকেনা। বিক্রেতাদের হাঁকডাক আর ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে জমে উঠেছে শহরের ফুটপাতে ঈদের বাজার।

শহরের হোটেলপট্টিতে শিশুদের পোশাক বিক্রি করেন মোস্তফা আলম। তিনি বলেন, দিনমজুর, রিকশাচালক ও নিম্নআয়ের মানুষেরা আমাদের এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। আবার মধ্যবিত্তরাও আসেন। অনেক মধ্যবিত্ত মানুষ আছেন, যারা বেতনে কুলাতে পারেন না, আর্থিক সামর্থ্য কম। তারা এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। এখানে ২০০-৫০০ টাকার মধ্যে শিশুদের পোশাক পাওয়া যায়।

ঈদবাজার, বগুড়ায় ফুটপাতই ভরসা নিম্নবিত্তের

তিনি আরও বলেন, আমার বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। ঈদের আগে শেষ সময়ে বেচাকেনা আরও বাড়বে।

স্টেশন রোডের ফুটপাতের পাঞ্জাবি বিক্রেতা রুবেল বলেন, আমার ভ্যানে শুধু পাঞ্জাবি আছে। দাম ৩০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত। বেচাকেনা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেচাকেনা মোটামুটি হচ্ছে।

ফুটপাতের দোকানগুলোতে ৩০০-৫০০ টাকার মধ্যে ছেলেদের শার্ট ও প্যান্ট এবং ৩০০-৬০০ টাকা দামে মেয়েদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে।

ফুটপাত থেকে ৫০০ টাকায় পাঞ্জাবি কিনেছেন রিকশাচালক আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের মতো নিম্নবিত্ত আর দিনমজুরদের ঈদ মার্কেট বলতেই ফুটপাতের দোকানগুলোকে বোঝায়। এ দোকানগুলোর বাইরে কেনাকাটা করার সামর্থ্য আমার নেই।

ঈদবাজার, বগুড়ায় ফুটপাতই ভরসা নিম্নবিত্তের

অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন জয়নাব বেগম। তিনি বলেন, মাত্র ৮০০ টাকায় দুই মেয়ে আর আমার জন্য জামা কিনতে পেরেছি। ফুটপাতের দোকান ছাড়া পোশাকের কেনাকাটা আমরা ভাবতেও পারি না।

বগুড়া শহরের থানা রোড ঘুরে দেখা গেছে, শিশুদের জুতা ও স্যান্ডেল ১০০-৪০০ টাকা, বড়দের স্যান্ডেল ২৫০-৪০০ টাকা, মেয়েদের হ্যান্ডব্যাগ ২০০-৩০০ টাকা, বেল্ট ১০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের চাপ ঠেকাতে ব্যবসায়ীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে ।

জামা কেনার পর মেয়ের জন্য ২০০ টাকায় হ্যান্ডব্যাগ ও আড়াইশো টাকায় স্যন্ডেল কিনেছেন রিকশাচালক আয়নাল আলী। তিনি বলেন, ফুটপাতে স্বল্পদামে স্যান্ডেল পাওয়া যায়। এখানে সবকিছুর দাম সাধ্যের মধ্যে। অনেক বেশি দাম হলে কেনাকাটা করতে পারতাম না।

থানা রোডে ফুটপাতে স্যান্ডেল বিক্রেতা আল আহসান বলেন, এবারে ঈদে স্যান্ডেলের নতুন নতুন কালেকশন এসেছে। ক্রেতাদের চাপ আমাদের জন্য সন্তোষজনক। ননব্র্যান্ডের স্যান্ডেলগুলো সহজেই যে কেউ অল্প দামে কিনতে পারবেন।

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।