জ্বালানির চাহিদা মেটাচ্ছে গোবরের ঘুঁটে
![জ্বালানির চাহিদা মেটাচ্ছে গোবরের ঘুঁটে](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/cow-dung-1-20240411173721.jpg)
নীলফামারীতে গ্যাস ও জ্বালানি কাঠের বিকল্প হিসেবে ঘুঁটের চাহিদা বাড়ছে। লাঠিতে গোবর মাখিয়ে কিংবা চাকতির মতো বানিয়ে তা শুকিয়ে তৈরি করা হয় ঘুঁটে। সারা বছর ব্যবহার করা যায় এ জ্বালানি।
নীলফামারীর পলাশবাড়ী, লক্ষ্মীচাপ, টুপামারী, চওড়া, সোনারায়সহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুঁটে তৈরি করতে দেখা গেছে। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে ঘুঁটে তৈরি করা হয়। গরুর গোবর দিয়ে গোল করে ছোট ছোট মুঠা কেউবা গোবরের সঙ্গে তুস মিশিয়ে সেগুলো পাটকাটি/বাঁশের কঞ্চির সঙ্গে পেঁচিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় ঘুঁটে।
কাঁচা লাকড়িগুলো শুকানোর জন্য বাড়ির উঠানে রোদে দাঁড় করে রাখা হয়। রোদের তাপ থাকলে ৪-৫ দিন পরই শুকিয়ে যায় লাকড়িগুলো। এভাবে নিত্যদিনের তৈরি শুকনো লাকড়ি মজুত রাখা হয় নিজ ঘরে।
একসময় বন-জঙ্গলের গাছের লতাপাতা সংগ্রহ করে জ্বালানির চাহিদা মেটাতেন গ্রামবাসী। দিন দিন বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় জ্বালানি কাঠের সংকট তীব্র হতে থাকে। এছাড়া বাজারেও জ্বালানি কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়েছে গ্রামের মানুষকে। তাছাড়া গ্যাস কিনে ব্যবহার করাও সম্ভব নয় সবার পক্ষে। এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে ঘুঁটের প্রতি ঝুঁকছেন গ্রামের গৃহিণীরা।
ডোমার উপজেলার সোনারায় হরিণচড়া এলাকার গৃহবধূ শেফালী রানী ও রত্না বেগম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই ঘুঁটে দিয়ে সব ধরনের রান্নার কাজ করে আসছি। এটি তৈরি করতে আমাদের খরচ লাগে না। শুকনা মৌসুমে আমরা অতিরিক্ত ঘুঁটে তৈরি করে মজুত রাখি। বর্ষাকালে নিশ্চিন্তে সেগুলো রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়।’
সদর চওড়া বড়গাছার বাসিন্দা সুবাস মালী, কৃষ্ণা বালা ও গায়েত্রী রানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজারে এখন জ্বালানি কাঠের অনেক। সিলিন্ডার গ্যাসের দাম হু হু করে বাড়ছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ রান্নার কাজে কাঠ কিংবা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করলেও তা নিম্নবিত্তদের নাগালের বাইরে। তারা না পারেন কাঠ কিনতে, না পারেন গ্যাস ব্যবহার করতে। এ অবস্থায় ভরসা ঘুঁটে।’
তারা আরও বলেন, রোদে শুকানোর পর গোবরের গন্ধ চলে যায় এবং লাঠিগুলো রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। এগুলো তৈরিতে পরিশ্রম হলেও খরচ কম পড়ে। গোবরের লাঠি সারা বছর গোয়ালঘরে কিংবা যেকোনো শুকনা স্থানে মজুত করে রাখা যায়। ঝড়-বৃষ্টির দিনে প্রয়োজন মতো এগুলো দিয়ে চুলায় রান্না করা যায়।
পরিবেশ অধিদপ্তর নীলফামারীর সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মণ বলেন, জ্বালানি কাঠের বিকল্প হিসেবে গোবরের ঘুঁটে পরিবেশের জন্য ভালো। এভাবে গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরি করে কেউ বাড়তি আয়ও করতে পারেন। গরুর গোবর ব্যবহার হচ্ছে এটা খুব ভালো দিক।
এ বিষয়ে নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক হাসান জাগো নিউজকে বলেন, গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ পরিবার গরু পালন করে। তাই অতীতের মতো জ্বালানির জন্য তারা আবারও গরুর গোবরের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, জ্বালানি শেষে এ থেকে বের হওয়া ছাই ফসলের জমিতে ব্যবহার করা হয়। এটি একইসঙ্গে উৎকৃষ্ট সার ও পোকা দমনেও ভূমিকা রাখে।
এসআর/আরএইচ/জেআইএম