ঈদে ব্রয়লারও জুটছে না গরিবের পাতে

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ১০:৫২ এএম, ১২ এপ্রিল ২০২৪

জাবেদ মিয়া ও রেজাউল করিমের থালায় ঈদের দিনও জোটেনি এক টুকরো ব্রয়লার মুরগির মাংস। এ অবস্থা শুধু তাদের নয়, নিম্নবিত্ত অনেক পরিবারেই একই চিত্র। এক বছরের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন তা ২৭০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কোথাও আবার ২৮০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। যা বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের কাছেই অসহনীয়। হু হু করে দাম বাড়তে থাকায় শুধু গরিব নয়, ঈদের সময় নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের পাতেও জুটছে না এ ব্রয়লার মুরগি।

ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার খবর কারো অজানা নয়। দাম যা-ই হোক, অন্তত লাগামের মধ্যে থাকবে এমন ধারণা ছিল সবার। কিন্তু ঈদ ঘিরে এক সপ্তাহের ব্যাবধানে দিনে দিনে একেবারে লাগামহীন মুরগির বাজার। প্রতিদিনই বেড়েছে দামের হিসাব। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২২০ টাকার মুরগি এখন ঈদবাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকায়।

ক্রেতা ও বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের সময় মুরগির চাহিদা বাড়ার কারণে বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে বাজারে প্রতিদিনই মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে।

মিরসরাইয়ের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

এদিকে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৩৫ থেকে ৬৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চল্লিশোর্ধ্ব জাবেদ মিয়া উপজেলার একটি ডেইরি ফার্মে কাজ করেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় হলেও পরিবার নিয়ে বারইয়ারহাটের একটি টিনশেড ঘরে ভাড়া থাকেন।

তিনি বলেন,‘রোজার মাস থেকে শুরু হলো ব্রয়লার মুরগি দাম বাড়া। ঈদ যত ঘনিয়ে আসে ততোই বাড়তে থাকে মুরগির দাম। বলতে গেলে, কয়েকদিন ধরে ব্রয়লার মুরগি খেতেই পারছি না। দাম বেশি, কিনতে গিয়েও কেনা হয় না। এবার ঈদের দিনেও মুরগি পেটে যায়নি। আমরা গরিব মানুষ, ব্রয়লারের দামের কাছেও হেরে যাচ্ছি।’

ঈদে ব্রয়লারও জুটছে না গরিবের পাতে

ভ্যানচালক ফজলুল হক বলেন, আমরা গরিব মানুষ, ঈদেতো আর গরুর মাংস খাওয়ার সৌভাগ্য হবে না। তাই মুরগির মাংস খাবো ভেবেছিলাম। এখন সেটার দামও হাতের নাগালে নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজান শুরুর পর থেকেই দফায় বাড়তে থাকে ব্রয়লার মুরগির দাম। আর সেইসঙ্গে ঈদকে কেন্দ্র করে যতই দিন ঘনিয়ে আসে ততোই বাড়তির দিকে যায় দাম। শেষ পর্যন্ত চাঁদরাতে মুরগির দাম ঠেকে ২৭০ টাকায়।

এভাবে দাম বাড়ার পেছনে খামারি ও ব্যবসায়ীরা বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেটকে দুষছেন। সঙ্গে রয়েছে পোল্ট্রি ফিড, মুরগির বাচ্চা, মেডিসিন, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শীত মৌসুমে উৎপাদন কম হওয়ার কারণ।

বিক্রেতাদের দাবি, ঈদের সময় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা একটু বেশি থাকে। সেই অজুহাতে খামারিরা মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর তাদেরও বাড়তি দামে কিনে ভোক্তাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বারইয়ারহাট পৌর বাজারের মেসার্স ইকবাল স্টোরের স্বত্তাধিকারী ইকবাল হোসেন বলেন, দাম বাড়তি সেটা মানছি। তবে এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। ঈদে মুরগির একটু চাহিদা বাড়তি থাকে। আর বাড়তি চাহিদা থাকায় সাপ্লায়াররা বাড়তি দাম নিচ্ছেন। আমরা শুধু কেনা দামেই বিক্রি করছি। বলতে গেলে, চাহিদা বাড়লেই সাপ্লায়াররা দাম বাড়ায়, আমাদেরও বাড়াতে হয়।

এম মাঈন উদ্দিন/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।