এমপি পুত্রের নাম থাকায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৭:১৮ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

বগুড়ায় ফাঁড়িতে ঢুকে পুলিশের সামনে যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে আহত করে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুর সঙ্গে আসা অনুসারীরা। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

মারধরের শিকার জিয়াদুশ শরিফ পরাগ জেলা যুবলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক। তার দাবি, সংসদ সদস্যের ছেলে প্রতীত আহসানের নাম এজাহারে থাকায় মামলা নিচ্ছে না পুলিশ।

যুবলীগ নেতা জিয়াদুশ বলেন, ঘটনার পর পরই ঈদের আগে তিনদিন মামলা করার জন্য থানায় গিয়েছিলাম। তবে সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা টালবাহানা করে ফিরিয়ে দেন। এমনকি ‘এমপির ছেলের বিরুদ্ধে কীভাবে মামলা করবেন?’ বলে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেয় পুলিশ।

জিয়াদুশ আরও বলেন, ঈদের পর থানায় আর যাইনি। আদালতে মামলার জন্য আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে এজাহারও দিয়েছি। আমি এখনও অসুস্থ। সবকিছু ঠিক থাকলে শিগগির আদালতে মামলা করবো।

যুবলীগ নেতা জিয়াদুশের অভিযোগপত্রে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুর ছেলে প্রতীত আহসান, শিবগঞ্জের পিরব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসিফ মাহামুদ, তার ছেলে আবির মাহামুদসহ নিঝুম আনসারী নাহিদ ও সিজান নামের দুই যুবককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৩৫ থেকে ৪০ জনকে।

এর আগে গত ৭ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে শহরের সাতমাথায় জিলা স্কুলের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রঞ্জু। এসময় বেপরোয়া গতিতে উল্টো পথে মোটারসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলার পিরব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসিফ মাহামুদের ছেলে আবির।

আবিরের মোটারসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছাত্রলীগ নেতার রঞ্জুর সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে দুজনই বাগবিতণ্ডতায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রঞ্জুর পক্ষ নিয়ে যুবলীগ নেতা পরাগ ও আদনান আবিরের ওপরে চড়াও হয়। খবর পেয়ে আবিরের বন্ধু ও এমপি পুত্র প্রতিত আহসান ৩০ থেকে ৩৫ জন ছাত্রলীগ নেতা রঞ্জুর ওপর হামলার চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা হট্টগোল দেখে দুপক্ষকে আটক করে সদর ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।

সেখানে ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) সুজন মিঞ্জার কক্ষে দুইপক্ষ মীমাংসার জন্য বসে। এরইমধ্যে ছেলের আটকের খবর পেয়ে এমপি রাগেবুল আহসান রিপু প্রায় অর্ধশত অনুসারী নিয়ে ফাঁড়িতে আসেন। এমপি আসার খবরে যুবলীগ নেতা পরাগ ও আদনান পুলিশ পরিদর্শক সুজনের কক্ষ থেকে বেরিয়ে ফাঁড়ির চত্বরে যায়। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে তাদের পেটাতে শুরু করে এমপির অনুসারীরা। হামলাকারীদের আটক না করে পুলিশ উল্টো পরাগ, আদনান ও ছাত্রলীগ নেতা রঞ্জুসহ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শকের কক্ষে আটক রাখে। এসময় এমপি রাগেবুল আহসান তার ছেলে ও হামলাকারীদের গাড়িতে করে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। মারধরের কারণে রাত ১টার দিকে পরাগ গুরুতর অসুস্থ হলে পুলিশের হেফাজতে সরকারি মোহাম্মাদ আলী হাসতাপালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া নানা নাটকীয়তার পর ছাত্রলীগ নেতা রঞ্জু ও যুবলীগ নেতা আদনানকে রাত সাড়ে ৩টার দিকে ফাঁড়ি থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

এ নিয়ে সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু ওই সময় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমি ছেলেকে নিতে পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে কারা মারধর করেছে, আমি জানি না। তবে ঘটনাটি দুঃখজনক।’

বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন বলেন, এ নিয়ে পরাগের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম দায় এড়িয়ে যান।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।