গবেষণা

প্লাস্টিক-পলিথিনে মরছে সুন্দরবনের প্রাণী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা
প্রকাশিত: ০৮:৪৯ এএম, ২২ এপ্রিল ২০২৪

সৌন্দর্য্যে মোড়া সুন্দরবনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণ। প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণের ফলে মারা যাচ্ছে সুন্দরবনের নদ-নদী ও স্থলভাগের প্রাণীকূল। ২০২২ সালে সমাপ্ত হওয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসানের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

তার প্রতিবেদনে বলা হয়, সুন্দরবনের মাটি ও পানিতে উদ্বেগজনক হারে মিলছে মাইক্রোপ্লাস্টিক (প্লাস্টিকের অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশ)। প্লাস্টিক ও পলিথিন হুমকি বাড়াচ্ছে জলজ ও স্থল বন্যপ্রাণী এবং গাছপালার। মাঝেমধ্যে বানর পলিথিন খেয়ে ফেলছে। দূষণের কারণে শুশুক-ডলফিন চোখে ভালো দেখে না। জেলিফিস ভেবে পলিথিনও খেয়ে ফেলে সামুদ্রিক এই প্রাণীগুলো। এমনকি গায়ে পলিথিন জড়িয়ে মারা যাচ্ছে কচ্ছপ। অন্যান্য জলজ প্রাণীও প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ খেয়ে ফেলছে। গাছের শ্বাসমূলের ওপর পলিথিন ও প্লাস্টিকসামগ্রী পড়ে ক্ষতি হচ্ছে।

তবে বন বিভাগ বলছে, সুন্দরবনকে দূষণমুক্ত রাখতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সুন্দরবনগামী নৌকা, ট্রলার এবং পর্যটকবাহী জাহাজগুলো থেকে যেন কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য নদী বা সুন্দরবনে না ফেলা হয় সেজন্য অভিযানও চালানো হচ্ছে।

জানা গেছে, সুন্দরবনের মধ্যে পর্যটক ও বনজীবীরা যেখানে সেখানে পলিথিন, চিপস, চানাচুর, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের থালা ও কাপ ফেলে থাকে। বনের যেসব এলাকায় মানুষের যাতায়াত বেশি, সেখানে প্লাস্টিক দূষণও বেশি। তবে পর্যটক ও বনজীবীরা শুধু সুন্দরবনের ভেতরে গিয়েই দূষণ ঘটাচ্ছেন না, বনসংলগ্ন লোকালয় থেকেও এগুলো জোয়ার-ভাটায় নদীর পানিতে ভেসে বনে যায়। বনসংলগ্ন ৮০টি গ্রাম থেকে ৫২টি নদী-খাল হয়ে জোয়ারের সময় একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের থালা ও কাপ বনের মধ্যে চলে যাচ্ছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় সুন্দরবনে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান একটি গবেষণা করেন।‘স্পেশাল ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ক্যারেক্টারাইজেশন অব মাইক্রোপ্লাস্টিক ইন দ্যা কোস্টাল ওয়াটার অ্যান্ড সেডিমেন্ট অব দ্যা বে অব বেঙ্গল কোস্ট, বাংলাদেশ’ নামক এই গবেষণার আওতায় সুন্দরবনের ছয়টি স্থানের পানি ও মাটি পরীক্ষা করা হয়।

মাহাদী হাসান জানান, সুন্দরবনের প্রতি লিটার পানিতে গড়ে দুটি মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং প্রতি কেজি মাটিতে গড়ে ৭৩৪টি মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে।

দূষণ রোধে বন বিভাগকে আরও সক্রিয় হওয়ার কথা বলেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক নাজমুস সাদাত।

তিনি বলেন, প্লাস্টিক সব সময় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। প্লাস্টিক দূষণের কারণে বনের স্থল ও জলজ প্রাণী এবং গাছপালার হুমকি বাড়ছে। এ বিষয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্লাস্টিক পণ্য বহন করা নিষিদ্ধ। কেউ প্লাস্টিক পণ্য নিয়ে গেলে তা সঙ্গে করে ফেরত নিয়ে আসে। যেসব এলাকায় পর্যটক বা জেলে বাওয়ালীদের যাতায়াত সেই এলাকাগুলোতে কঠোর নজরদারী করা হয়। শুধু তাই নয়, জেলে বাওয়ালীদেরকে জরিমানা করে তা আদায়ও করা হয়েছে। ফলে জেলে বাওয়ালীরা এখন অনেক সতর্কতার সঙ্গে বনে প্রবেশ করেন।

আলমগীর হান্নান/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।