মেহেরপুর

রাস্তা প্রশস্ত করতে কাটা হবে দেড় হাজার গাছ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর
প্রকাশিত: ০৪:৩২ পিএম, ১৬ মে ২০২৪

কেটে ফেলা হবে মেহেরপুরের রাস্তার দুই পাশের প্রায় দেড় হাজার গাছ। সড়ক প্রশস্ত করতে গাছগুলো কাটা হবে। এরইমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা পরিষদ। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের পর নতুন করে গাছ লাগানো হবে বলে জানিয়েছে সড়ক বিভাগ।

মেহেরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুর থেকে মুজিবনগর সড়কের দুই পাশে শোভা পাচ্ছে সারি সারি গাছ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবং পথচারীদের নানা সুবিধায় গাছগুলো যেন অমূল্য সম্পদ। কিন্তু এরইমধ্যে গাছগুলো অপসারণ করতে জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। রাস্তা প্রশস্ত করতে ২১ কিলোমিটার রাস্তার পাশের ১৪৪০টি গাছ কাটতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

বনবিভাগের তথ্য বলছে, গত ১০ বছরে মেহেরপুরে বিভিন্ন সড়কে ১৪ হাজার গাছ কাটা হয়েছে, যারা আনুমানিক মূল্য আড়াই কোটি টাকা। এবার নতুন করে কাটা হবে আরও প্রায় দেড় হাজার গাছ।

চলতি বছর মেহেরপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ৩০ এপ্রিল এ তাপমাত্রা রেকর্ড করে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস। বছর বছর তাপমাত্রা বেড়ে চললেও আবারও দুটি সড়ক সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা সড়ক বিভাগ। আগের বছর একটি সড়কের জন্য দুই হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এবার এক হাজার ৪৪০টি গাছ কাটতে ব্যবস্থা নিতে জেলা পরিষদে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুটি সড়কের যেসব গাছ কাটা হবে, সেসব গাছে নম্বর দেওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে গাছগুলোর ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা। তারা আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দ্বিগুণ গাছ লাগানোর দাবি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের শহর থেকে আমঝুপি পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার অংশ চার লেনে উন্নীত করা হবে। এতে প্রধান বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে পাশের ছোট-বড় বনজ ও ফলদ প্রজাতির ৯৭৬টি গাছ। এছাড়া মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের মুজিবনগর পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অংশে দুর্ঘটনা এড়ানোর অজুহাতে ৪৬৪টি গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা সড়ক বিভাগ ২১ এপ্রিল জেলা পরিষদে একটি চিঠি দেয়। এতে গাছের তালিকা যুক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে দেওয়া দ্বিতীয় চিঠিতে তাগাদা দেওয়া হয়।

jagonews24

বুধবার (১৫ মে) মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়ক ও মেহেরপুর-আমঝুপি সড়ক ঘুরে দেখা যায় বট, পাকুড়, মেহগনি, শিশু, কড়ই, রেইনট্রি, কাঁঠাল, আম, জামসহ নানা প্রজাতির গাছে লাল রং দিয়ে নম্বর লেখা। এসব গাছের কিছু সড়কের ওপর শাখা ছড়িয়ে আছে। তবে বেশিরভাগই সড়কের বাইরে। গাছ কাটার এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীরা।

মেহেরপুর চাদবিল গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কটি বছরখানেক আগেও ছিল সবুজে ঘেরা। গাছগুলো কেটে ফেলায় দিনে চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। আবারও মেহেরপুর-মুজিবনগর ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের প্রায় দেড় হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটিকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি।

আরিফ হোসেন নামের একজন পথচারী বলেন, প্রায় বছরখানেক আগে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে দুই হাজার ৭৮৬টি শতবর্ষী গাছ কেটে রাস্তা প্রশস্তের উদ্যোগ নেয় মেহেরপুর সড়ক বিভাগ। গাছ কাটা হলেও নতুন করে লাগানো হয়নি একটিও গাছ। রাস্তার দুপাশ এখন ধু ধু মরুভূমি।

মুজিবনগরের কেদারগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী শাহানুল ইসলাম বলেন, মেহেরপুরে এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি। যে গাছগুলো প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করছে, এসব গাছ কাটা হলে আগামী বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বসবাসই কঠিন হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন

মেহেরপুর বার্ড ওয়াচিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল মানিক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাছ বাঁচলে বন্যপ্রাণীরা বাঁচবে। প্রকৃতি বাঁচলে আমরা বাঁচবো। গাছ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী পাখিদেরও আবাসস্থল। কোনো পাখিই আমাদের কাছে খাবার চায় না। ওই গাছগুলো থেকেই সংগ্রহ করে। অথচ গাছগুলো সড়ক সম্প্রসারণের জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে।’

ক্লাবের সভাপতি এম এ মুহিত বলেন, বড় গাছের অভাবে অনেক পাখি এখন হুমকির মুখে। তালগাছ ও শতবর্ষী বড় গাছ কেটে ফেলার কারণে বজ্রপাতের হার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তাই ঝড়-বৃষ্টির সময় মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারাচ্ছেন। প্রকৃতি ও পরিবেশকে না বাঁচিয়ে স্মার্ট সিটি গড়তে গেলে একদিন প্রকৃতির অভিশাপে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।

jagonews24

ছহিউদ্দীন ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রেজা জাগো নিউজকে বলেন, ব্যক্তিগত জমিতে কিংবা প্রাকৃতিক বনভূমিতে গাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে না। প্রকল্পের নামে গাছ কাটার আগে নতুন গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করতে হবে।

তিনি বলেন, গাছপালা ছাকনি হিসেবে কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকে। নিয়ম অনুযায়ী গাছ যদি কাটতেই হয় তাহলে দ্বিগুণ গাছ লাগাতে হবে।

মেহেরপুরের গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক এনামুল আযীম জাগো নিউজকে জানান, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক চওড়া করতে খলিশাকুণ্ডী সেতু থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার অংশে বছরখানেক আগে দুই হাজার ৭৮৬টি শতবর্ষী গাছ গাছ কাটা হয়েছে। অথচ একটি গাছও রোপণ করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী গাছ যদি কাটতেই হয় তাহলে দ্বিগুণ গাছ লাগাতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো গাছ লাগাতে দেখিনি। যা আমাদের জেলাবাসীর জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক।

জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মজিদুর রহমান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে গাছ গণনার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিয়ম মেনে বাকি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

বনবিভাগের জেলা ফরেস্টার এস টি হামিম হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, নতুন করে এ রাস্তার পাশে গাছ লাগানোর অনুমতি নেই বনবিভাগের। শিগগির টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছগুলো অপসারণ করা হবে।

মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, গাছগুলো রাস্তার ওপর চলে আসায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য এগুলো কেটে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর বনায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।

আসিফ ইকবাল/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।