ঠাকুরগাঁওয়ে দুদকের মুখোমুখি সরকারি-বেসরকারি ৩৪ দপ্তর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ০৪:২৮ পিএম, ০৪ জুন ২০২৪

ঘুস, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি সম্পদ ও অর্থ আত্মসাত, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কর্মচারীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ ৩৪টি সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের ৬০টি অভিযোগের ওপর দুদকের গণশুনানিতে মুখোমুখি হয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সোমবার (৩ জুন) সকাল ৯টায় ঠাকুরগাঁও জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে ‘রুখব দুর্নীতি গড়ব দেশ, হবে সোনার বাংলাদেশ’ স্লোগানে আয়োজিত গণশুনানিতে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়। এতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে সেবা পেতে হয়রানি, ঘুস-দুর্নীতির শিকার সেবাপ্রত্যাশী জনসাধারণ এবং সেবা প্রদানকারী সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।

গণশুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এসময় দুদক সচিব বলেন, ‘আমাদের গণশুনানিটি একটি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষকে নির্ভয়ে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছি এবং তাৎক্ষণিকভাবে কিছু কিছু অভিযোগের সমাধানও দেওয়া হয়েছে। আশা করি যে সমস্যাগুলোর সমাধান দেওয়া যায়নি, তা ৭-১০ দিনের মধ্যে দেওয়া হবে কিংবা এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হবে ‘

ঠাকুরগাঁওয়ে দুদকের মুখোমুখি সরকারি-বেসরকারি ৩৪ দপ্তর

তিনি আরও বলেন, অনুসন্ধান ও তদন্তের ব্যাপারে দুদক কখনোই কাউকে ছাড় দেবে না। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সরকারি পরিষেবা যে কোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি একদিনে শেষ হওয়ার নয়। এটি দমনে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে। গণশুনানিতে শোনা সব অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গণশুনানিতে জেলার ৩০টি সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের সেবা পেতে হয়রানির শিকার, ঘুস দিতে বাধ্য করা, বঞ্চনার শিকার ইত্যাদি নানা বিষয়ে ৬৯টি অভিযোগ উঠে আসে। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়।

এসব অভিযোগের পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক, হাসপাতাল, সিভিল সার্জন, পাসপোর্ট অফিস, পল্লী বিদ্যুৎ, পৌরসভা, বিআরটিএ, সাব-রেজিস্ট্রি, ভূমি, শিক্ষা অফিস, প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, বিএডিসি অফিস, আনসার ভিডিপি, থানা, পুলিশ ইত্যাদি দপ্তরগুলোতে মানুষ বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

শুনানিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ও দুদকের মামলার আসামি শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকার ও জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙিয়ে পীরগঞ্জ উপজেলার অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের ভয় দেখিয়ে তাদের কৃষিজমি জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রয় ও টিসিবির পণ্য প্যাকেটজাতকরণে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

ঠাকুরগাঁওয়ে দুদকের মুখোমুখি সরকারি-বেসরকারি ৩৪ দপ্তর

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কৃষককে সেচ সুবিধা দেওয়ার নামে ঘুস বাণিজ্য, পাম্প বসানোর জন্য হয়রানি ও ৫০ হাজার টাকা ঘুস চাওয়ার অভিযোগ করেন এক ব্যক্তি। আনসার ভিডিপির কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে যানবাহনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভুয়া বিল ভাউচার করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি বিধিবিধান অমান্য ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করেন এক ব্যক্তি। এক নারী অভিযোগ করেন, রূপালী ব্যাংক ঠাকুরগাঁও শাখায় মৃত স্বামীর সঞ্চিত টাকা তুলতে গিয়ে তিনি ঘুস ও হয়রানির শিকার হন।

সাব রেজিস্ট্রার অফিসে টাকা ছাড়া সেবা মেলে না। সেটেলমেন্ট অফিসে হয়রানি ও ঘুস চাওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কর্মকর্তা এবং পৌরসভায় জন্মনিবন্ধনে অতিরিক্তি টাকা আদায় ও হয়রানির অভিযোগ করেন এক ব্যক্তি।

পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জিএম মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে জিতেন্দ্র নাথ নামের এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, টাকা ছাড়া এখানে সেবা মেলে না। বাড়ির উঠানে পরিত্যক্ত বিদ্যুৎ পিলারের সংস্কার ও সরাতে ঘুস চাওয়ার অভিযোগ তোলেন এক গ্রাহক। এছাড়া পীরগঞ্জ থানা ও সদর থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা সংক্রান্ত হয়রানিসহ ৩৪টি সরকারি-বেসকারি প্রতিষ্ঠানের ৬০টি অভিযোগের ওপর গনশুনানি করা হয়।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহাবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে আরও বক্তব্য রাখেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক তালেবুর রহমান, পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক ও ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক।

তানভীর হাসান তানু/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।