ফুটপাত দখল, আ’লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে পিপিকে পেটানোর অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ১১ জুন ২০২৪
ছবি: জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন

যশোরে ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক পাবলিক প্রসিকিউটরকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের বিরুদ্ধে। রোববার (৯ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের কসবা পুলিশ ফাঁড়ির মধ্যে ঘটনাটি ঘটলেও সোমবার বিকেলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

ভুক্তভোগী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। মারধরের শিকার হয়ে ভুক্তভোগী আইনজীবী যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে পুলিশ ফাঁড়ির মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার প্রকাশ্যে পাবলিক প্রসিকিউটরকে মারধরের ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে। আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষেরা বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে সমালোচনা করছেন। মারধরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের কর্মসূচি দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি।

অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল জানান, আইনজীবী সমিতির (২য় ভবন) সামনের ফুটপথে কিছু ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী টেবিল পেতে কাপড় বিক্রি করেন। সেখানে এক ব্যবসায়ীকে জোর করে উঠিয়ে, অন্য একজনকে বসায় শাহীন নামে এক ব্যক্তি।

এসময় তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নির্দেশে তিনি এ টেবিল বসিয়েছেন। এটা কেউ উঠালে তার হাত কেটে নেওয়া হবে।’

এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ পার্শ্ববর্তী পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দেন। এরপর এসআই হেলাল মীমাংসার জন্য শাহীনসহ অন্য ব্যবসায়ীদের ডেকে পাঠান। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা ও পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলকেও ফাঁড়িতে ডেকে নেন। কিন্তু হঠাৎ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন একদল যুবক নিয়ে ফাঁড়িতে আসেন। তিনি মুস্তাফিজুর রহমান মুকুলকে ‘ধান্দাবাজি করিস’ উল্লেখ করে মারপিট শুরু করেন।

মুকুল আরও জানান, লজ্জা, ঘৃণায় তিনি কাউকে কিছু না বলে বাড়ি চলে যান। কিন্তু মানুষজন ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে যায়। এরপর সোমবার লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাদের অবহিত করেন।

ফুটপাত দখল, আ’লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে পিপিকে পেটানোর অভিযোগ

অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল একজন পাবলিক প্রসিকিউটর। তাকে কী কারণে মারবো। আমি ফাঁড়িতে গিয়েছিলাম দারোগাকে দাবড়াতে। মানে ব্যাপার হয়েছে কি, অ্যাডভোকেট মুকুল ও বাচ্চু সাহেব ফুটপাত ইজারা দিয়ে খায়। আমাদের একটা ছেলে (শাহীন) গেছে সেখানে দোকান বসানোর জন্য। মুকুল সাহেব ফাঁড়িতে অভিযোগ দিলে দারোগা সাহেব সেই ছেলেটিকে ডেকে পাঠায়। আমি তাকে ফাঁড়িতে যেতে বলি। কিন্তু মুকুল সাহেব দারোগাকে দিয়ে ছেলেটাকে ভালো মতোন পিটিয়েছে। বিষয়টি জানার পর ওসি এসপিকে জানিয়ে আমি ফাঁড়িতে যাই। পরে ওসি ও অ্যাডিশনাল এসপি ফোন দিয়ে আমাকে জানায় যা হওয়ার হয়ে গেছে আপনি ছেলেটাকে নিয়ে যান আমরা ওই দারোগার বিরুদ্ধে অফিশিয়ালি ব্যবস্থা নেব। এরপর আমি সেখান থেকে চলে আসি। মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল একজন আইনজীবী আমি ওনাকে কেন মারতে যাবো।’

এ ব্যাপারে জানতে যশোর কসবা পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই রেজাউল করিমকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, ফাঁড়িতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি গোলযোগ মীমাংসা হচ্ছিল। ফুটপাতে দোকান দেয়া অবৈধ ফলে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।

এদিকে পাবলিক প্রসিকিউটারকে মারধরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। মঙ্গলবার (১১ জুন) সকাল সাড়ে ৯টায় ১ নম্বর আইনজীবী সমিতির সামনে এই কর্মসূচি পালিত হবে।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোর্তজা ছোট বলেন, নিজ দলের নেতার কাছে নিজ দলের আইনজীবীর মারধরের শিকার হওয়া বিষয়টি দুঃখজনক। ভুক্তভোগী আইনজীবী আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা বারের নেতৃবৃন্দ বসবো। তারপর পরবর্তী কর্মসূচি হাতে নিবো।

মিলন রহমান/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।