স্বাধীনতার অভাব নেই, পুষ্টির অভাবও দূর করব : পরিকল্পনামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৯ পিএম, ০৯ জুন ২০১৯

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এখন আমাদের বেশি প্রয়োজন উন্নত প্রজাতির মাছ ও সবজি। যাতে পুষ্টির কোনো অভাব বাঙালির না থাকে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার অভাব নেই, এখন পুষ্টির অভাবও আমরা দূর করব।

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ভবনে এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এর আগে সারাদেশে শহর ও পল্লী এলাকায় ‘কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি ২০১৮’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কৃষি শুমারি ২০১৯ এর উদ্বোধন করেন তিনি।

ষষ্ঠবারের মতো কৃষি শুমারির ((শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ)) মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে আজ রোববার। ২০ জুন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে শুমারির তথ্য সংগ্রহের কাজ চলবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘(শুমারির কাজ) সুচারুরূপে, সুন্দরভাবে সম্পন্ন করবেন, যাতে করে এটা বিশ্বমানের একটি কাজ হয় এবং আমরা যেন গর্ববোধ করতে পারি। এজন্য আমাদের সরকারের যা যা করা দরকার আর্থিক, সাংগঠনিক, প্রাতিষ্ঠানিক-সবকিছু প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে দেবেন। এই আশ্বাস আমি আপনাদেরকে দিচ্ছি।’

তিন মাসের মধ্যে শুমারির প্রাথমিক ফল এবং ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ফল জানিয়ে দেয়া হবে। এই শুমারিতে কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়লে তা তুলে ধরার জন্যও অনুরোধ জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

এম এ মান্নান বলেন, আমাদের জাতীয় জিডিপিতে কৃষির অবদান শতকরা ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এটা আগামীতে আরও বাড়বে। ধানের ক্ষেত্রে কমলেও মাছ, সবজি, ফলের ক্ষেত্রে অনেক বাড়বে।

তিনি বলেন, ধানের ক্ষেত্রে কমা মানে, ধান তো আমরা প্রচুর উৎপাদন করছি। এর প্রায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি বলে আমার বিশ্বাস।’

আমাদের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য বোঝার জন্য কিছু দিন পরপর শুমারি করতে হয় উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘গণনার বাইরে কিছুই নেই। কী পরিমাণ ধান, গম, পাট, ফল, মাছ, গরু, মহিষ, ভেড়া, হাস, মুরগি, টার্কি উৎপাদন হচ্ছে এই সকল বিষয় সম্পর্কে আমরা জানতে পারব। গোটা অর্থনীতিতে তার অবস্থান কেমন, তা-ও বুঝতে পারব। আগেরটার সঙ্গে মিলিয়ে দেখব বাড়ছে না কমছে। বাড়লেও আনুপাতিক হারটা কী হারে বাড়ছে –এসব।’

Mannan

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সারাদেশে শহর ও পল্লী এলাকায় ‘কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি ২০১৮’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কৃষি শুমারি ২০১৯ পরিচালনা করছে। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে এই শুমারি পরিচালিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে কৃষি শুমারির প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) জাফর আহাম্মদ খান জানান, কৃষি শুমারি পরিচালনার মাধ্যমে কৃষি খানার সংখ্যা, খানার আকার, ভূমির ব্যবহার, কৃষির প্রকার, শস্যের ধরন, চাষ পদ্ধতি, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগীর সংখ্যা, মৎস্য উৎপাদন ও চাষাবাদ সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত জনবল সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এ তথ্য-উপাত্ত কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ এবং অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে বেঞ্চমার্ক তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটা দেশব্যাপী বৃহৎ আকারে পরিচালিত একটি পরিসংখ্যানিক কার্যক্রম।

প্রতি দশ বছর অন্তর কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩ অনুযায়ী জনশুমারি এবং অর্থনৈতিক শুমারির পাশাপাশি কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি পরিচালনা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এদেশে ১৯৬০ সালে প্রথমবারের মতো নমুনা আকারে কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে ১৯৭৭ সালে প্রথম কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩-৮৪, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ষষ্ঠবারের মতো দেশে কৃষি শুমারি ২০১৯ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

এই কৃষি শুমারিতে একজন প্রধান শুমারি সমন্বয়কারী, একজন জাতীয় শুমারি সমন্বয়কারী, একজন অতিরিক্ত জাতীয় শুমারি সমন্বয়কারী, ১০ জন বিভাগীয় শুমারি সমন্বয়কারী, ৯০ জন জেলা শুমারি সমন্বয়কারী (ডিসিসি), ৪৯২ জন উপজেলা শুমারি সমন্বয়কারী (ইউসিসি), ২ হাজার ১২৭ জন জোনাল অফিসার, ২৩ হাজার ১৬৫ জন সুপারভাইজার এবং ১ লাখ ৪৪ হাজার ২১১ জন তথ্য সংগ্রহকারী কাজ করছেন বলে অনুষ্ঠানে জানোনো হয়।

প্রকল্প পরিচালক জানান, কৃষি শুমারি-২০১৯ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পল্লী এলাকায় গড়ে ২৪০টি, পৌরসভা এলাকায় গড়ে ৩০০টি এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গড়ে ৩৫০টি খানা নিয়ে একটি গণনা এলাকা গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি গণনা এলাকায় তথ্য সংগ্রহের জন্য স্থানীয়ভাবে শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের গণনাকারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশে জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১৬.৭ কোটি। প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ, অকৃষি খাতে জমির ব্যবহার বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে বর্তমানে কৃষি জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

কৃষি খাতে সঠিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কৃষি শুমারি ২০১৯ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন কৃষি শুমারির প্রকল্প পরিচালক।

পিডি/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।