সরবরাহ-চাহিদা কম, তবে কমেনি দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২৪ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২০

>> কোথাও কোথাও পণ্য পরিবহনে বাধার অভিযোগ
>> সবজির বাজারে স্বস্তি
>> চালের দাম কমেনি

করোনাভাইরাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির সরবরাহ কমেছে। সরবরাহের পাশাপাশি কমেছে চাহিদাও। ফলে দামও রয়েছে নিয়ন্ত্রণে। তবে সরবরাহের সঙ্গে চাহিদা কমলেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল।

সবজির সরবরাহ কমার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনা আতঙ্কের কারণে অনেক পরিবহন চালক সবজি নিয়ে ঢাকায় আসতে চাচ্ছেন না। আবার কোথাও কোথাও পণ্য পরিবহনে বাধা দেয়া হচ্ছে। যে কারণে সরবরাহ কমেছে।

তারা বলছেন, সবজির সরবরাহ যে হারে কমেছে চাহিদা কমেছে তার থেকে বেশি। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সবজির দাম আরও কম হতো। আর চালের দামের বিষয়ে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বাজারে চালের সরবরাহ কমে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়ে গেছে দাম। কুষ্টিয়া ও নওগাঁয়ের কিছু ব্যবসায়ী এই দাম বাড়ানোর পেছনে রয়েছেন।

বগুড়া থেকে কারওয়ানবাজারে সবজি নিয়ে আসা আয়নাল নামের একজন বলেন, বগুড়াতে এখন সবজির দাম অনেক কম। তবে একসঙ্গে বেশি সবজি আনা যাচ্ছে না। কারণ, মাঝে মধ্যে সবজি পরিবহনে পুলিশ বাঁধা দিচ্ছে। তাই আমরা কম সবজি আনছি।

তিনি বলেন, সবজি কম আনলেও দাম সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পরিবহনের জন্য আগের থেকে তুলনামূলক বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। ফলে সবজি কম দামে কিনতে পারলেও লাভ তেমন হচ্ছে না।

‘এখন যে হারে সবজি আসছে অন্য সময় এমন হারে আসলে দাম কয়েকগুণ বেড়ে যেত। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বের না হওয়ার কারণে সবজির বিক্রি কমে গেছে। যে কারণে দাম বাড়েনি।’

কারওয়ানবাজারের একটি আড়তে কাজ করা কালাম বলেন, কারওয়াবাজারে তিন বছরের বেশি সময় ধরে আছি। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকদিন ধরে সবজি অনেক কম আসছে। এরপরও প্রতিদিনই সবজি অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। আগে কখনও এমন পরিস্থিতি দেখিনি।

মানিকনগর থেকে সবিজ নিয়ে আসা একটি পরিবহনের চালক হামজার আলী বলেন, আমাদের ওদিক থেকে সবজি পরিবহনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। গাড়িতে সবজি দেখলেই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তবে অন্য সময়ের তুলনায় এখন সবজি অনেক কম আসছে।

সবজি কম আসার কারণ হিসেবে এই চালক বলেন, ঘর থেকে এখন মানুষ কম বের হচ্ছে। কিন্তু কিছু সবজি আছে যেগুলো খেতে বেশি দিন রাখা যায় না। খেত মালিকরা দাম না পেলেও বাধ্য হয়ে এসব সবজি তুলে বাজারে নিয়ে আসছেন। এরপরও অনেকের খেতে সবজি নষ্ট হচ্ছে।

এদিকে বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, করলা ৪০-৫০ টাকা, বরবটি ৪০-৫০, শশা ২০-৩০, পেঁপে ৩০-৪০, পাকা টমেটো ২০-৪০, শিম ৪০-৫০, গাজর ২০-৩০, মুলা ১০-২০, বেগুন ২০-৪০, পটল ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আগে এসব সবজির দাম আরও বেশি ছিল।

সবজির পাশাপাশি পেঁয়াজ, আলু, কাঁচামরিচেও দামও সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে। করোনা আতঙ্কে ৮০ টাকায় উঠে যাওয়া পেঁয়াজের কেজি এখন ৩০-৪০ টাকায় নেমে এসেছে। ২৮ টাকায় বিক্রি হওয়া গোল আলু ২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ২৫-৩০ টাকা পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ ১৫-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগে হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী জুয়েল বলেন, আড়তে গেলে এখন সবজির অভাব হচ্ছে না। তবে আমাদের বিক্রি কম, তাই মাল কম নিয়ে আসছি। ঢাকায় যারা থাকতো তাদের অর্ধেকের বেশি ছুটি পেয়ে গ্রামে চলে গেছে। যে কারণে বিক্রি অনেক কমে গেছে।

কম দামে সবজি কিনতে পারায় ক্রেতাদের মধ্যেও স্বস্তি দেখা দিয়েছে। রামপুরা বাজার থেকে বাজার করা মনিরুজ্জামান বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কে সবাই যে হারে কেনাকাটা করেছিল, তাতে মনে হচ্ছিল বন্ধের মধ্যে সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু এখন বাজারে এসে দেখছি সবজির দামে বাড়েনি। উল্টো কমেছে। এটা খুব ভালো লাগছে।

এদিকে খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে নাজিরশাল। করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আগে এই দুই ধরনের চাল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

সরু চালের পাশাপাশি দাম বেড়েছে গরিবের মোটা চলেরও। পাইজাম ও লতা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, যা করোনা আতঙ্কের আগে ছিল ৪২ থেকে ৪৮ টাকা কেজি। স্বর্ণ চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, যা করোনাভাইরাস আতঙ্কের আগে ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা।

খিলগাঁওয়ের চাল ব্যবসায়ী জানে আলম ভূঁইয়া বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর চাল কেনার এক ধরনের হিড়িক পড়ে যায়। এতে দেখতে দেখতে চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। এখন চালের বিক্রি কমলেও দাম কমছে না। কারণ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের চাল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ছোট কিছু প্রতিষ্ঠানের চাল পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে চাহিদা কমলেও চালের দাম কমছে না।

এমএএস/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।