হুমকির মুখে বিসিকের সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি, শিল্পোৎপাদনসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ছে। এর ফলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) অধীন ৭৬টি শিল্প এলাকার প্রতিটি কারখানা বর্তমানে বন্ধ। এসব কারখানায় শিল্প মালিকদের প্রায় ২৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার আর্থিক বিনিয়োগ রয়েছে। করোনার কারণে বিশাল অংকের বিনিয়োগ আজ হুমকির মুখে পড়েছে।
রোববার (৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ বিসিক শিল্প মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিসিক শিল্পনগরীর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সুরক্ষায় সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন বিসিক শিল্প মালিকরা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা প্রাদুর্ভাবে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় বিশেষ পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিসিক শিল্প মালিকরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিসিক শিল্প মালিক সমিতির ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি, ঢাকা শিল্প নগরী শিল্প মালিক সমিতির (কেরানীগঞ্জ বিসিক) সভাপতি ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সহসভাপতি হোসেন এ সিকদার জানান, দেশের সব বিসিক শিল্প এলাকার কারখানাসমূহে দক্ষ, অর্ধদক্ষ, অদক্ষ মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ ৯০ হাজার ৬২০ জন শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত আছেন। আর এসব কারখানায় শিল্প মালিকদের প্রায় ২৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার আর্থিক বিনিয়োগ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশব্যাপী লকডাউন থাকায় বিসিক শিল্প এলাকায় বর্তমানে সব উৎপাদনমুখী কলকারখানা বন্ধ রয়েছে। ফলে এ বিশাল অংকের বিনিয়োগ আজ হুমকির মুখে পড়েছে।
বিসিক শিল্প এলাকার কারখানাসমূহ মূলত স্থানীয় বাজার নির্ভর। কাঁচামালের সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন, স্থানীয় বাজারে বিপণন, সরবরাহ, রফতানি কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় কিছুদিন পর শ্রমিকদের বেতন, বোনাস দেয়া শিল্প মালিকদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তাছাড়া পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরও আসন্ন। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ৫টি প্যাকেজ ঘোষণা করায় বাংলাদেশ বিসিক শিল্প মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি দাবি করেছেন বিসিক শিল্প মালিকরা।
এর মধ্যে রয়েছে- বিসিক শিল্প এলাকার কারখানাসমূহের পানির বিল আগামী ৬ মাস মওকুফ করার জন্য এবং প্রতি মাসের বিদুৎ ও গ্যাস বিল পরবর্তী ৬ মাস ৩টি সমবিভাজিত কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ প্রদান করা।
বিসিকের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি শিল্প প্লটের নির্ধারিত একটি সার্ভিস চার্জ রয়েছে, যা আগামী ১ বছরের জন্য মওকুফ এবং বিসিক শিল্প নগরীর অন্তর্ভুক্ত প্লটের কিস্তি আগামী ১ বছরের জন্য স্থগিত রাখতে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
হোসেন এ সিকদার বলেন, শিল্পোদ্যোক্তাদের এ বছরের আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) যেন আগামী তিন বছরে সমান তিনটি কিস্তিতে সমন্বয়ের মাধ্যমে জরিমানা ছাড়া প্রদান করতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের বিশেষ বিবেচনার আহ্বান জানান।
পাশাপাশি বিসিক শিল্পনগরীতে স্থাপিত নতুন শিল্প কারখানা এবং বিএমআরই (ব্যালেন্সিং, আধুনিকায়ন, বিস্তার এবং প্রতিস্থাপন) শিল্প ইউনিটের মূলধনী যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য গৃহীত ঋণসহ অন্যান্য ঋণের সুদ আগামী ৬ মাসের জন্য মওকুফ করতে সুপারিশ করেছেন মালিকরা। শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, মোড়ক সামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ কর অবকাশ ও শুল্ক রেয়াতের দাবি জানান তিনি।
এছাড়া শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া জরুরি, তাই সরকারকে এ বিষয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান হোসেন এ সিকদার ।
তিনি বলেন, ছোট ছোট এ শিল্পগুলো আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অর্থনীতি সুরক্ষায় শিল্প রক্ষার কোনো বিকল্প নেই। স্থানীয় বাজারের জোগান, আমদানি-বিকল্প পণ্য উৎপাদন, রফতানি বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পকে চলমান দুঃসময়ের হাত থেকে রক্ষায় সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এসআই/এমএসএইচ