চাহিদার তুলনায় পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত, কারসাজি হলে কঠোর ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১৬ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২০
ফাইল ছবি

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন- চাল, ডাল, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। মজুতের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় বেশি। কোনো পণ্যের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তারপরও কৃত্রিম উপায়ে কোনো পণ্যের সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে এবং করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় সভাপতিত্ব করে তিনি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পবিত্র রমজান মাসের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত আগে থেকেই বাড়ানো হয়েছে। দেশীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের চাহিদার তুলনার বেশি পণ্য উৎপাদন করেছে। আমদানিযোগ্য পণ্য অনেক আগেই পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু পণ্য পরিবহন এবং আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাসের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কোনো পণ্যেরই সংকট নেই এবং মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা বা কারণ নেই। সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্বশীল হয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। সব পণ্যের সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গঠিত টাস্কফোর্স এবং বিভিন্ন কমিটিকে আরও তৎপর হয়ে কাজ করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ বছর পবিত্র রমজান উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বলেও মন্ত্রী জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর সাশ্রয়ী মূলে ট্রাক সেলের মাধ্যমে বিক্রয় করা হচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে বিগত যেকোনো বছরের তুলনায় এবার বেশি পরিমাণে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। টিসিবির নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় তিন হাজার ডিলার এসব পণ্য ট্রাক সেলে বিক্রয় করছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম ধরা পড়ছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে ৯০টি টিম নিয়মিত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া টিসিবির কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য ঢাকায় ৮টি এবং ৬৪ জেলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকার অভিযান জোরদার করেছে। আশা করা যাচ্ছে, কোনো সমস্যা হবে না।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতে সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এগুলো হলো- সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে ও আসন্ন রমজানে খাদ্যসামগ্রী পরিবহনে যেন কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে পরিবহন ব্যবস্থা করতে হবে, টিসিবির ট্রাকসেল পুনর্বিন্যাস করার বিষয় বিবেচনা করা হবে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়া হবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে সৃষ্ট কনটেইনার জট নিরসনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাথে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রেখে, প্রয়োজনে জরুরি পণ্য খালাসের জন্য আমদানিকারকদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তা দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করা হবে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রতিদিনের বাজারদর সিটি করপোরেশনকে সরবরাহ করার বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা, জেলা প্রশাসন ঢাকা রমজান উপলক্ষে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় পরিচালিত টিসিবির পণ্য বিক্রয় স্থানসমূহে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, সারাদেশে পাইকারি বাজার চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর তাদের অভিযান আরও জোরদার করবে এবং একই সঙ্গে সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাণিজ্য সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় অব্যাহত রাখবে, করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে দেশের বাজারে এর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ ওষুধ সামগ্রী বিকল্প বাজার সন্ধানে এখন থেকেই আমদানিকারকরা প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।

এছাড়া টিসিবি বছরব্যাপী তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক তৎপর থাকবে এবং করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গঠিত টাস্কফোর্স আরও জোরদারভাবে কাজ করবে।

সভা সঞ্চালনা করেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। সভায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান তপন কান্তি ঘোষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফদতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) মো. ওবায়দুল আজম, ডিজিএফআই, এনএসআই, স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রতনিধি, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রি. জে. মো. হাসান জাহাঙ্গীর, এফবিসিসিআই.র প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল, এস আলম গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার সালাহ উদ্দিন, দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদক, আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এমইউএইচ/এমএসএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।