কমছে না আদার ঝাঁজ, সবজি চড়া
ভোক্তা অধিদফতরের অভিযানের পরও রাজধানীর বাজারগুলোতে কমেনি আদার দাম। আগের মতোই ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে আদা। এর সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। করোনা প্রকোপের মধ্যে সবজির দাম তুলনামূলক কম থাকলেও রোজার শুরুতে দাম বেড়ে যায়।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার আগে আদার কেজি ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। ৮ মার্চ বাংলাদেশ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এক লাফে পণ্যটির দাম বেড়ে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা হয়ে যায়। এরপর দুই সপ্তাহ আগে আদার কেজি ৩০০ টাকায় উঠে যায়।
হঠাৎ আদার এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় ২২ এপ্রিল শ্যামবাজারে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়। অভিযানে বেরিয়ে আসে কেজিপ্রতি আদার আমদানি ব্যয় পড়েছে একশ টাকার নিচে। সেই আদা পাইকারিতে বিক্রি করা হচ্ছে ২৩৫ টাকা কেজি।
অনিয়ম পাওয়ায় শ্যামবাজারের ফয়সাল এন্টারপ্রাইসকে ২০ হাজার টাকা এবং মেসার্স আয়নাল অ্যান্ড সন্সকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিদফতর। পাশাপাশি মিরপুর শাহ আলী পাইকারি বাজারে অতিরিক্ত দামে আদা বিক্রয় করার অপরাধে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদফতরের পক্ষ থেকে ‘২৩৫ টাকার আদা ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি’ এমন তথ্য দিয় সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, অভিযানের সময় শ্যামবাজারের ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স আয়নাল অ্যান্ড সন্সকে প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকায় লেখা আদার দাম ২৩৫ টাকার ক্রয়মূল্যের রশিদ অর্থাৎ কেজিপ্রতি কত টাকা পড়েছে সেটি দেখতে চাওয়া হয়। ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ তা দেখাতে করতে পারেনি। বরং জানায়, চট্টগ্রামের আমদানিকারক তাদের ২৩৫ টাকা কেজি আদা বিক্রির কথা বলেছে। ওই আমদানিকারকের কাছে মোবাইল ফোনে গত কয়েকদিনের এলসি সর্বোচ্চ মূল্য ৯৭ টাকার আদা কীভাবে ২৩৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হলে তা তিনি দিতে পারেননি। তারপর মোবাইলে কথোপকথনের একপর্যায়ে ফয়সাল এন্টারপ্রাইজকে ১২০ টাকা কেজিতে আদা বিক্রি করতে বলেন তিনি।
ভোক্তা অধিদফতর থেকে এমন দাবি করা হলেও গত কয়েকদিনে রাজধানীর খুচরা বাজারে আদার দাম কমেনি। এখনও বিভিন্ন বাজারে আদার কেজি ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবির) তথ্যেও আদার কেজি ৩০০ টাকা বিক্রির চিত্র উঠে এসেছে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, খুচরা বাজারে দেশি আদার কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এবং আমদানি করা আদার কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরায় ৩০০ টাকা কেজি আদা বিক্রি করা মিলন বলেন, গত কয়েকদিনে পাইকারিতে আদার দাম কমেছে কি-না বলতে পারব না। আমাদের কাছে যে আদা আছে তা বেশি দামে কেনা। এই আদা ৩০০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। এই দামে বিক্রি করেও আমাদের খুব একটা লাভ হচ্ছে না।
এদিকে করোনার প্রথম দেড় মাস তুলনামূলক কম দামে সবজি পাওয়া গেলেও রোজার আগে ২৪ এপ্রিল থেকে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজর এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ২০ টাকা বিক্রি হওয়া শসার দাম বেড়ে হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
গত কয়েক সপ্তাহের মতো এখনও বাজারে সব থেকে দামি সবজি সজনের ডাটা। বাজারভেদে সজনের ডাটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে কোথাও কোথাও ৬০ টাকা কেজি পাওয়া যাচ্ছিল। দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে পাকা টমেটোও। গত সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
এছাড়া করলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ঝিঙে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চিচিংগা ২০ থেকে ৩০ টাকা, ঢেড়স ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
এমএএস/এসআর/জেআইএম